ইসলামের দৃষ্টিতে মানুষের কাজকর্ম হারাম, হালাল, মাকরুহ, মুবাহ ও মুস্তাহাব-এই পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। সংক্ষেপে এগুলো সম্পর্কে আলোচনা করা হল:
হারাম : ইসলামে যে সব কাজকে সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ করেছে তাকে হারাম বলা হয়। এ ধরনের কাজ বর্জন করা বাধ্যতামূলক। হারাম কাজ করলে আল্লাহর শাস্তি পেতে হবে। যেমন: গীবত করা বা অপবিত্র কিছু খাওয়া ইসলামে হারাম। সূর্যদয় এবং সূর্যাস্তের সময় নামাজ আদায় করা। হালাল : হালাল অর্থ বৈধ। ইসলাম যে সব কাজকে বৈধ বা জায়িজ স্বীকৃতি দিয়েছে ইসলামি পরিভাষা অনুযায়ী তাই হালাল। একজন মুসলিমের উচিত সর্ব ব্যাপারে হালাল পন্থা ও পথ-পদ্ধতি অবলম্বন করা।যেমন : ব্যবসা হালাল এবং সুদ হারাম।
মাকরুহ : মাকরুহ এমন আমল যা পালন করার তুলনায় না করা উত্তম। অর্থাৎ যে কাজ করা জায়েজ কিন্তু না করা উত্তম। মাকরুহ কাজ করলে শাস্তি পেতে হবে না, কিন্তু এ ধরনের কাজ এড়িয়ে যেতে বলেছে ইসলাম। যেমন : আসরের নামাজের পর থেকে মাগরিব পর্যন্ত ঐ দিনের আসরের নামাজ ছাড়া অন্য কোনো নামাজ আদায় করা।
মুস্তাহাব : মুস্তাহাব এমন আমল যা পালন না করলে কোনো শাস্তি পেতে হবে না। কিন্তু পালন করা ইসলামের দৃষ্টিতে উত্তম। মুস্তাহাব কাজ করলে সওয়াব ও আল্লাহর দরবারে পুরস্কার আছে। যেমন: প্রতি আরবি মাসের প্রথম ও শেষ বৃহস্পতিবার রোজা রাখা মুস্তাহাব।
মুবাহ : এটি এমন কর্ম যা সম্পাদন বা বর্জন কোনোটিই ইসলামের দৃষ্টিতে নিষিদ্ধ নয়। আবার একাজ করতে উত্সাহিতও করা হয়নি। যেমন : ক্ষুধা না থাকা অবস্থায় কোনো প্রকার ক্ষতির সম্ভাবনা ছাড়া খাবার গ্রহণ করা।
গ্রন্থনা : মাওলানা মিরাজ রহমান
মূল লিংক
==============================
মুবাহ হলো ফরজ, ওয়াজিব ও নফলের মতোই আমলের স্তর বোঝাতে ব্যবহৃত একটি পরিভাষা। মুবাহ হলো, যা সাধারণভাবে হালাল বা জায়েজ। অর্থাৎ, যে জিনিস বা কাজটির সঙ্গে সত্তাগতভাবে ইসলামের কোনো আদেশ বা নিষেধ সম্পৃক্ত নয়।
যেমন পানাহার করা, বেচাকেনা করা, পর্যটনমূলক বা জীবিকার সন্ধানে ভ্রমণ, রমজানের রাতের বেলা স্ত্রীর সঙ্গে সহবাস করা।
মুবাহ কাজের উদাহরণ : মুবাহর সংজ্ঞাতে ‘সত্তাগতভাবে’ কথাটি এ জন্য বলা হয়েছে যেহেতু হতে পারে এর সঙ্গে তৃতীয় কোনো একটি বিষয় সম্পৃক্ত হয়ে সেটাকে নির্দেশিত কিংবা নিষিদ্ধ বিষয়ে পরিণত করবে।
উদাহরণ ‘পানি ক্রয় করা’ মূলত একটি মুবাহ কাজ। কিন্তু, যদি পানি ক্রয় করার ওপর ফরজ নামাজের জন্য ওজু করা আটকে থাকে সেক্ষেত্রে পানি কেনা ওয়াজিব। কেননা যে মাধ্যম ছাড়া কোনো ওয়াজিব কর্ম সম্পাদিত হয় না সে মাধ্যমও ওয়াজিব।
আরেকটি উদাহরণ পর্যটনমূলক ভ্রমণ মূলত একটি মুবাহ কাজ। কিন্তু, এ ভ্রমণ যদি হয় বিধর্মী কোনো দেশে যেখানে ফিতনা, পাপাচার ও ব্যভিচার ইত্যাদির সয়লাব; এমন ভ্রমণ হারাম। কেননা এ ভ্রমণ হারাম কর্মে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যম।
আরেকটি উদাহরণ পর্যটনমূলক ভ্রমণ মূলত একটি মুবাহ কাজ। কিন্তু, এ ভ্রমণ যদি হয় বিধর্মী কোনো দেশে যেখানে ফিতনা, পাপাচার ও ব্যভিচার ইত্যাদির সয়লাব; এমন ভ্রমণ হারাম। কেননা এ ভ্রমণ হারাম কর্মে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যম।
মুবাহর সম্বন্ধে : আরও জানতে পড়তে পারেন ইবনে কুদামার লিখিত ‘রওজাতুন নাজের ওয়া জুন্নাতুল মুনাজির’ (১/১৫০-২১০), জারকাশির লিখিত ‘আল-বাহরুল মুহিত’ (১/১৪০-২৪০) এবং ইবনে উছাইমীনের ‘শারহুল উসুল মিন ইলমিল উসুল’ (৪৬-৬৮)।
প্রশ্ন
ফরয (আবশ্যকীয়), মুস্তাহাব (আবশ্যকীয় নয়), মুবাহ (ঐচ্ছিক), মাকরুহ (অপছন্দনীয়) ও হারাম (নিষিদ্ধ)। আমি আশা করব, আপনারা আমাকে প্রত্যেক শ্রেণীর একটি করে উদাহরণ জানাবেন।
উত্তর
আলহামদুলিল্লাহ।
এক:
ওয়াজিব: যা পালন করার জন্য শরিয়তপ্রণেতা আবশ্যকীয়ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন।
এর উদাহরণ হচ্ছে- পাঁচ ওয়াক্ত নামায, রমযানের রোযা, যাকাত দেয়ার সামর্থ্যবান হলে যাকাত, হজ্জ করার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ।
'ওয়াজিব'-কে فرض (ফরয), فريضة (আবশ্যকীয়), حتم (অপরিহার্য), لازم (অনিবার্য) ইত্যাদিও বলা হয়। এ ধরণের আমল সম্পাদনকারী সওয়াব পাবেন এবং না করলে শাস্তি পাবে।
দুই:
মানদুব: যা পালন করার জন্য শরিয়তপ্রণেতা নির্দেশ দিয়েছেন; তবে আবশ্যকীয়ভাবে বা অপরিহার্যরূপে নয়।
এর উদাহরণ হচ্ছে- কিয়ামুল লাইল, পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের সাথের সুন্নত নামাযগুলো ও পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের অতিরিক্ত নামাযগুলো, প্রতি মাসে তিনদিন রোযা রাখা, শাওয়াল মাসে ছয় রোযা রাখা, গরীবদেরকে দান-সদকা করা এবং নিয়মিত যিকির-আযকার ও ওযিফাগুলো পড়া।
'মানদুব'-কে মুস্তাহাব, সুন্নত, মাসনূন, নফল ইত্যাদিও বলা হয়। এ ধরণের আমল পালনকারী সওয়াব পাবেন; তবে বর্জনকারী শাস্তি পাবে না।
তিন:
হারাম বা নিষিদ্ধ: যাতে লিপ্ত হওয়া থেকে শরিয়তপ্রণেতা আবশ্যকীয়ভাবে নিষেধ করেছেন। যেমন- ব্যভিচার, মদপান, পিতামাতার অবাধ্যতা, দাঁড়ি না রাখা, নারীদের বেপর্দা চলাফেরা করা।
হারাম কাজ বর্জনকারী সওয়াব পাবেন, আর হারামে লিপ্ত ব্যক্তি শাস্তি পাওয়ার উপযুক্ত হবে।
চার:
মাকরুহ: যাতে লিপ্ত হওয়া থেকে শরিয়তপ্রণেতা নিষেধ করেছেন; তবে আবশ্যকীয়ভাবে নয়। যেমন- কোন কিছু বাম হাতে গ্রহণ করা ও বাম হাতে প্রদান করা। নারীদের জন্য মৃতব্যক্তির জানাযার সাথে যাওয়া। এশার নামাযের পর আলাপ-আলোচনা করা, কাঁধ খালি রেখে এক কাপড়ে নামায আদায় করা, ফজরের নামাযের পর সূর্যোদয়ের আগে নফল নামায পড়া এবং আছরের নামাযের পর সূর্যাস্তের আগে নফল নামায পড়া।
মাকরুহ আমল বর্জনকারী সওয়াব পাবেন; কিন্তু মাকরুহ আমলে লিপ্ত হলে শাস্তি দেওয়া হবে না।
পাঁচ:
মুবাহ বা হালাল বা জায়েয: যে আমলের সাথে সত্তাগতভাবে কোন আদেশ বা নিষেধ সম্পৃক্ত নয়।
যেমন- পানাহার করা, বেচাকেনা করা, পর্যটনমূলক বা জীবিকার সন্ধানে ভ্রমণ, রযমানের রাতেরবেলা স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা।
মুবাহ –এর সংজ্ঞাতে 'সত্তাগতভাবে' কথাটি এ জন্য বলা হয়েছে যেহেতু হতে পারে এর সাথে তৃতীয় কোন একটি বিষয় সম্পৃক্ত হয়ে সেটাকে নির্দেশিত কিংবা নিষিদ্ধ বিষয়ে পরিণত করবে।
উদাহরণত: ‘পানি খরিদ করা’ মূলত একটি মুবাহ কাজ। কিন্তু, যদি পানি খরিদ করার উপর ফরয নামাযের জন্য ওযু করা আটকে থাকে সেক্ষেত্রে পানি খরিদ করা ওয়াজিব। কেননা যে মাধ্যম ছাড়া কোন ওয়াজিব কর্ম সম্পাদিত হয় না সে মাধ্যমও ওয়াজিব।
আরেকটি উদাহরণ- পর্যটনমূলক ভ্রমণ মূলত একটি মুবাহ কাজ। কিন্তু, এ ভ্রমণ যদি হয় বিধর্মী কোন দেশে যেখানে ফিতনা, পাপাচার ও ব্যভিচার ইত্যাদির সয়লাব; এমন ভ্রমণ হারাম। কেননা এ ভ্রমণ হারাম কর্মে লিপ্ত হওয়ার মাধ্যম।
এ বিষয়ে আরও জানতে পড়তে পারেন: ইবনে কুদামার লিখিত 'রওযাতুন নাযের ওয়া জুন্নাতুল মুনাযির' (১/১৫০-২১০), যারকাশির লিখিত 'আল-বাহরুল মুহিত' (১/১৪০-২৪০) এবং ইবনে উছাইমীনের 'শারহুল উসুল মিন ইলমিল উসুল' (৪৬-৬৮)।
আল্লাহ্ই সর্বজ্ঞ।
No comments:
Post a Comment