This Blog Contains Al Quran Indexing. Al Quran Searching. The Bible Verse which similar to Alquran are also described in this Blog. Tags: Al Quran, Arabic, Tafhimul Quran, Tafheemul Quran, Arabic search, Tafhimul Quran App, Al Quran Search, আল কুরআন, তাফহীমুল কুরআন, তাফহিমুল কুরআন।
প্রশ্ন: ৪৫৭ : ইসলামে কি গণতন্ত্র জায়েজ ?
প্রশ্ন: ৪৫৬ : রোজার কাযা কাফফারা ও ফিদইয়া ।
কাজা হলো একটি রোজার পরিবর্তে একটি আর কাফফারা হলো ষাটটি। এরূপ ওজর ছাড়া যে কয়টা রোজা রেখে ভাঙবে, প্রতিটির পরিবর্তে একটি করে রোজা কাজা এবং একই রমজান মাসের জন্য তার সঙ্গে যুক্ত হবে একটি কাফফারা। অর্থাৎ একটি রোজা যৌক্তিক কারণ ছাড়া ভাঙা হলে তার জন্য কাজা ও কাফফারা হবে একষট্টিটি রোজা, দুটি ভাঙলে হবে বাষট্টিটি রোজা, তিনটি ভাঙলে হবে তেষট্টিটি রোজা। অনুরূপ ত্রিশটি ভাঙলে হবে নব্বইটি রোজা।
কাফফারা তিন প্রকারে আদায় করা যায়। প্রথমত, একটি গোলাম আজাদ করা বা দাসমুক্ত করা; দ্বিতীয়ত, ধারাবাহিকভাবে ষাটটি রোজা পালন করা। কাফফারার রোজার মাঝে বিরতি হলে বা ভাঙলে আরেকটি কাফফারা ওয়াজিব হয়ে যাবে। তৃতীয়ত, ষাটজন মিসকিনকে দুই বেলা ভালোভাবে আহার করানো বা আপ্যায়ন করা।
সাধারণ অসুস্থতায় যদি সুস্থ হয়ে রোজা কাজা আদায় করার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে সুস্থ হওয়ার পর কাজা আদায় করতে হবে। আর যদি এমন অসুস্থতা হয় যা সুস্থ হয়ে রোজা রাখার মতো সম্ভাবনা না থাকে বা কম থাকে অথবা বার্ধক্যজনিত কারণে রোজা পালনে সম্পূর্ণ অক্ষম হন, তাহলে প্রতি রোজার জন্য এক ফিতরা পরিমাণ ফিদইয়া দিতে হবে। ফিদইয়া হলো একজন লোকের এক দিনের খাবারের সমান। (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৮৪)।
জাকাত-ফিতরা যাদের দেওয়া যায়, ফিদইয়া তাদের দিতে হয়। ফিদইয়া এককালীন বা একসঙ্গেও আদায় করা যায়। একজনের ফিদইয়া অনেককে দেওয়া যায়, আবার অনেকের ফিদইয়া একজনকেও দেওয়া যায়। অনুরূপ এক দিনের ফিদইয়া একাধিক জনকে দেওয়া যায়, একাধিক দিনের ফিদইয়া একজনকে দেওয়া যায়। যাকে ফিদইয়া দেওয়া হবে, তার রোজাদার হওয়া জরুরি নয়। যেমন নাবালেগ মিসকিন, অসহায় অসুস্থ বা অতিবৃদ্ধ, যারা নিজেরাই রোজা পালনে অক্ষম, তাদেরও জাকাত, ফিতরা ও সদকার মতো ফিদইয়া প্রদান করা যাবে। ফিদইয়া প্রদানের পর সুস্থ হলে এবং রোজা রাখতে সক্ষম হলে পুনরায় রোজা কাজা আদায় করতে হবে। (ফাতাওয়া রশিদিয়া)।
নাবালেগ ছোট্ট শিশুরা নিজেদের আগ্রহে ও বড়দের উৎসাহে রোজা রাখে। যদিও তাদের জন্য রোজা রাখা ফরজ নয়। এমতাবস্থায় তারা যদি রোজা রেখে কখনো ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায় যেকোনোভাবে রোজা ভেঙে ফেলে, তাহলে তাদের এই রোজার কাজা বা কাফফারা কোনোটিই লাগবে না। তারপরও যদি তারা বড়দের সঙ্গে কাজা রোজা রাখতে শুরু করে এবং তা আবার ভেঙে ফেলে তারও কাজা লাগবে না। (হিদায়া)
ফিদইয়া ও কাফফারা দেওয়া যাবে যাঁরা জাকাত ও ফিতরা তথা ফরজ ও ওয়াজিব সদকা গ্রহণ করতে পারেন। যথা ‘ফকির, মিসকিন, সদকা কর্মী, অনুরক্ত ব্যক্তি ও নওমুসলিম, ক্রীতদাস, ঋণগ্রস্ত ব্যক্তি, আল্লাহর পথে জিহাদ ও বিপদগ্রস্ত বিদেশি মুসাফিরের জন্য।’ (সুরা-৯ [১১৩] তাওবাহ (মাদানি), রুকু: ৮/১৪, আয়াত: ৬০, পারা: ওয়ালামু-১০, পৃষ্ঠা ১৯৭/১৫)।
বুখারি শরিফ ও মুসলিম শরিফে সহিহ রিওয়ায়াতে বর্ণিত হয়েছে: একদা রমজানে এক লোক রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর কাছে এসে বললেন, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.), আমি নিজেকে ধ্বংস করে ফেলেছি, আমি রোজা পালন অবস্থায় স্ত্রী সহবাস করে ফেলেছি। রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁকে বললেন, তুমি একজন দাসকে মুক্ত করে দাও। সে বলল, এমন সক্ষমতা আমার নেই। রাসুলুল্লাহ (সা.) বললেন, তবে এর বদলে দুই মাস (বা ৬০ দিন) রোজা রাখো। লোকটি বলল, এমন শারীরিক সক্ষমতা আমার নেই। তখন তিনি (সা.) বললেন, তবে তুমি ৬০ জন মিসকিনকে খাওয়াবে। লোকটি বলল, হে আল্লাহর রাসুল (সা.), এ রকম আর্থিক সক্ষমতাও তো আমার নেই। তখন তিনি (সা.) তাঁকে অপেক্ষা করতে বললেন। এর কিছুক্ষণ পর কোনো একজন সাহাবি রাসুল (সা.)-কে এক ঝুড়ি খেজুর হাদিয়া দিলেন। তখন রাসুলুল্লাহ (সা.) ওই লোকটিকে ডেকে বললেন, এগুলো নিয়ে গিয়ে গরিবদের মধ্যে সদকাহ করে দাও। লোকটি বলল, ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) অত্র এলাকায় আমার মতো গরিব আর কে আছে? এ কথা শুনে রাসুলে করিম (সা.) স্বাভাবিকের চেয়ে একটু বেশি হাসলেন। তিনি (সা.) বললেন, ‘আচ্ছা, তবে খেজুরগুলো তুমিই তোমার পরিবার নিয়ে খাও।’ (বুখারি, হাদিস নম্বর: ১৩৩৭, মুসলিম, হাদিস নম্বর: ১১১১)।
===============================================
মাসয়ালা: কোনো সুস্থ বালেগ মুসলমান ইচ্ছাকৃত রমজানের রোজা না রাখলে বা অনিচ্ছায় ভেঙে ফেললে অথবা কোনো ওজরের কারণে ভেঙে ফেললে পরে ওই রোজার কাজা আদায় করতে হবে। আর বিনাওজরে ইচ্ছাকৃত পানাহার বা সহবাসের মাধ্যমে রমজানের রোজা ভেঙে ফেললে তার কাজা ও কাফফারা অর্থাৎ লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখতে হবে।
মাসয়ালা: কাফফারা আদায়ের ক্ষেত্রে লাগাতার ষাট দিন রোজা রাখার সময় যদি এক দিনও বাদ যায়, তাহলে আবার শুরু থেকে গণনা আরম্ভ হবে, পূর্বেরগুলো বাদ হয়ে যাবে। -মাবসুতে সারাখসি: ৩/৮২
মাসয়ালা: মুসাফির ও অসুস্থ ব্যক্তি রোজা রাখতে কষ্ট হলে ওই দিন না রেখে পরে কাজা করে নিতে পারবে, এ ক্ষেত্রে কাফফারা দিতে হবে না। -সূরা বাকারা: ১৮৪-১৮৫
মাসয়ালা: মাসিক পিরিয়ড ও সন্তান প্রসবোত্তর স্রাবের সময় রোজা রাখা জায়েয নেই। তবে সে দিনগুলোর রোজার কাজা দিতে হবে, কাফফারা দিতে হবে না।
মাসয়ালা: রোজা রাখার পর দিনের বেলায় যদি কোনো নারীর পিরিয়ড শুরু হয়, তখন ওই নারীর জন্য খাওয়া-দাওয়ার অনুমতি আছে। তবে লোকজনের সামনে না খেয়ে নির্জনে খাওয়া-দাওয়া করবে। আর যে মহিলা পিরিয়ডের কারণে রোজা রাখেনি, দিনের যে সময়ে তার রক্ত বন্ধ হবে, তখন থেকেই খাওয়া-দাওয়া বন্ধ করে রোজাদারের ন্যায় দিনের অবশিষ্ট অংশটুকু অতিবাহিত করবে এবং পরবর্তীতে উভয়েই ওই দিনের রোজা কাজা করে নিবে। -আল লুবাব: ১/১৭৩
মাসয়ালা: রোজার জন্য নারীদের ঔষধ খেয়ে পিরিয়ড সাময়িক বন্ধ রাখা অনুচিত। এতে শারীরিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তবে এ পদ্ধতিতে পিরিয়ড বন্ধ থাকা অবস্থায় রোজা-নামাজ করলে তা আদায় হয়ে যাবে। -ফাতাওয়ায়ে রহিমিয়া: ৬/৪০৪, আপকে মাসায়েল আওর উনকা হল: ৩/২৭৮)
রোজার ফিদইয়া
মাসয়ালা: যদি কোনো ব্যক্তি অসুস্থতার কারণে অভিজ্ঞ মুসলিম ডাক্তারের পরামর্শে রোজা রাখা খেকে বিরত থাকেন এবং পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাহলে সুস্থ হওয়ার পর রোজার কাজা আদায় করতে হবে, ফিদইয়া দিলে আদায় হবে না। পক্ষান্তরে যদি আরোগ্য হওয়ার সম্ভাবনা না থাকে বা এমন বৃদ্ধ যে রোজা রাখতে অক্ষম তাহলে সে ফিদইয়া আদায় করবে। রোজা রাখতে অক্ষম বলতে শরিয়তের দৃষ্টিতে বার্ধক্যজনিত দুর্বলতা, মারাত্মক রোগ ইত্যাদি বোঝায়, যা থেকে আরোগ্য লাভ করা এবং রোজা রাখার শক্তি ফিরে পাওয়া অসম্ভব বলে মনে হয়। -সূরা বাকারা: ১৮৪-১৮৫
মাসয়ালা: প্রত্যেক রোজার ফিদইয়া হলো, সদকা ফিতরের সমপরিমাণ, অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি গম বা তার সমপরিমাণ অর্থ। -আওযানে শরইয়্যাহ, পৃ. ১৮
মাসয়ালা: শারীরিক সুস্থতা ফিরে আসলে এবং রোজার কাজার ওপর সক্ষম হলে অতীতের রোজা কাজা করতে হবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪২৭
মাসয়ালা: ফিদইয়া আদায়ের ক্ষেত্রে ধনী-গরীবের মাঝে কোনো তারতম্য নেই, সবার ওপর সমানহার প্রযোজ্য। তবে দারিদ্রতার দরুন ফিদইয়া দিতে একেবারেই অক্ষম হলে তওবা করবে। পরবর্তীতে কখনও সামর্থ্যবান হলে অবশ্যই ফিদইয়া আদায় করে দিবে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২০৭
মাসয়ালা: ৬০ মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়ানোর পরিবর্তে প্রত্যেককে এক ফিতরা পরিমাণ অর্থাৎ ১ কেজি ৬৩৫ গ্রামের কিছু বেশি গম বা তার সমপরিমাণ অর্থ দেওয়া যেতে পারে। তবে শর্ত হলো, ওই টাকা দ্বারা মিসকিনকে খানা খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে হবে। একজন গরিবকে প্রতিদিন ১ ফিতরা পরিমাণ করে ৬০ দিনে দিলেও আদায় হবে। ৬০ দিনের ফিতরা পরিমাণ একত্রে বা এক দিনে দিলে আদায় হবে না। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/৫১৩, রদ্দুল মুহতার: ৩/৪৭৮
ইচ্ছাকৃত রোজা ভঙের কাফফারা
মাসয়ালা: কোনো ব্যক্তি ইচ্ছাকৃতভাবে একাধিকবার একই রমজানের রোজা ভাঙার কারণে এক কাফফারাই যথেষ্ট। অর্থাৎ ভেঙে ফেলা সব রোজার জন্য ৬০ জন মিসকিনকে দু’বেলা খানা খাওয়াবে, অথবা প্রতি মিসকিনকে এক ফিতরা পরিমাণ সম্পদ সদকার মাধ্যমেও কাফফারা আদায় করা যাবে। -বাদায়েউস সানায়ে: ২/১০১, রদ্দুল মুহতার: ২/৪১৩
মাসয়ালা: মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে তার কাজাকৃত রোজার কাফফারা হিসেবে অন্য কারো রোজা রাখার বিধান নেই। তবে মৃত্যুকালে সে ব্যক্তি ফিদইয়া প্রদানের অসিয়ত করলে (যা পূর্ণ করা ওয়াজিব) তার রেখে যাওয়া সম্পদের এক তৃতীয়াংশ মাল থেকে অসিয়ত পূর্ণ করা জরুরি। অসিয়ত না করলে ফিদইয়া দেয়া জরুরি নয়। তবে বালেগ ওয়ারিসরা নিজ নিজ অংশ হতে তা আদায় করলে আদায় হওয়ার আশা করা যায়। -আল জাওহারাতুন নায়্যিরাহ: ১/১৪৩, আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪২৪
=================================
রমজান মাসে যারা রোজা পালনে অক্ষম। অতিশয় পীড়িত, বয়োবৃদ্ধ, এমনকি দৈহিক দুর্বলতার কারণে রোজা রাখা অনেক কষ্ট সাধ্য ব্যাপার বা প্রাণহানি ঘটতে পারে। তাদের রোজার ব্যাপারে আল্লাহ তাআলা কুরআনে উল্লেখ করেন, ‘ (যারা রোজা রাখতে অক্ষম) তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্য দান করবে। (সুরা বাক্বারা : আয়াত ১৮৪) অক্ষম ব্যক্তির রোজার করণীয় তুলে ধরা হলো-
অক্ষম ব্যক্তির রোজা
যে বা যারা রোজা রাখতে অক্ষম। অতিশয় বৃদ্ধ বা গুরুত্বর অসুস্থ ব্যক্তি, সুস্থ হওয়ার তেমন কোনো সম্ভাবনা নেই; অথবা রোজা রাখলে প্রাণহানি ঘটতে পারে, এমন ব্যক্তির রোজা রাখার পরিবর্তে ফিদইয়া আদায় করবে।
অক্ষম ব্যক্তির ফিদইয়া আদায়ের নিয়ম
ইসলামি শরিয়তে ফিদইয়া হলো- একটি করে ‘সদকাতুল ফিতর’ বা তার সমপরিমাণ অর্থ একজন মিসকিনকে দান করা। অর্থাৎ ১ কেজি ৬৫০ গ্রাম আটা/গম বা তার সমপরিমাণ মূল্য গরিবদের দান করাই হলো রোজার ‘ফিদইয়া’। অথবা একজন ফকির বা মিসকিনকে দুই বেলা পেট পুরে খাওয়ানো।
লক্ষণীয়-
এ অক্ষম বা অসুস্থ ব্যক্তি যদি পরবর্তীতে সুস্থ হয়ে যায় তবে ঐ ব্যক্তি নিজেই রোজার কাযা আদায় করে নিবে।
ফিদইয়া আদায় না করে মারা গেলে-
অসুস্থ বা রোজা রাখতে অক্ষম ব্যক্তি যদি ফিদইয়া আদায় না করে মারা যায় এবং মৃত ব্যক্তি কর্তৃক ফিদইয়া আদায়ের ব্যাপারে অসিয়ত থাকে, তবে তার পরিত্যক্ত সম্পদ থেকে ফিদইয়া আদায় করা আবশ্যক কর্তব্য; অসিয়ত না থাকলে ফিদইয়া আদায় করা মুস্তাহাব।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে অক্ষম ব্যক্তির ফিদইয়া আদায় করে কুরআনের বিধানের বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
==================================
যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা'আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।' (সুরা বাকারা : আয়াত ১৮৫)
এভাবে কুরআনুল কারিমে মুসাফির, অপারগতায় কিংবা অসুস্থ ব্যক্তির জন্য রমজানের রোজা কাজা করার বিধান দিয়েছেন। আবার যারা অসুস্থতায় রোজা রাখতে পারেনি আর সে অবস্থায় মারা গেছেন তাদের রোজার ফয়সালা দিয়েছেন স্বয়ং রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। হাদিসে এসেছে-
হজরত ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, যদি কোনো ব্যক্তি রমজান মাসে অসুস্থ হয়ে রমজান মাস শেষ হওয়া পর্যন্ত সুস্থ না হয় এবং এ অবস্থায়ই মারা যায় তাহলে তার পক্ষ থেকে মিসকিনকে খাবার খাওয়াতে হবে। তার রোজার কাজা নেই। আর তার ওপর মানতের রোজা থাকলে তার পক্ষ থেকে অভিভাবক তার কাজা রোজা আদায় করবে।' (আবু দাউদ)
এ হাদিসের আলোকে বোঝা যায়, অসুস্থ অবস্থায় রোজা রাখতে অপারগ ব্যক্তি মারা গেলে তার রোজার জন্য মিসকিন খাওয়াতে হবে। তার পক্ষে কেউ রোজা রাখা লাগবে না। আর ওই ব্যক্তির যদি কোনো মানতের রোজা থাকে তবে তার পক্ষ থেকে কেউ তা আদায় করে নিতে হবে।
সুতরাং যাদের আত্মীয়-স্বজন কিংবা আপনজন রোজায় অসুস্থ হয়ে রোজা রাখতে পারেননি এবং অসুস্থ হয়ে মারা গেছেন তারা এ রোজার পরিবর্তে মিসকিন খাওয়াবেন। এ জন্য তার পক্ষ থেকে কারও রোজা রাখতে হবে না। আর যদি ওই ব্যক্তির মানবেতর রোজা থাকে তবে তার পক্ষ থেকে কেউ শুধু রোজা আদায় করবে।
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে হাদিসের ওপর যথাযথ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
===================================================
বার্ধক্য বা অসুস্থতার কারণে রোযা পালনে অক্ষম ব্যক্তির ফিদিয়ার পরিমাণ
প্রশ্ন :
আমার বাবা বার্ধক্য ও অসুস্থতার কারণে অক্ষম হয়ে গোটা রমজান মাসে রোযা রাখতে পারেননি। এই রোযাগুলোর কাযা পালন করার আগেই বাবা মারা গেছেন। দরিদ্রদেরকে অর্থ দানের মাধ্যমে আমরা তাঁর রোযার কাফফারা আদায় করেছি। পরবর্তীতে জানতে পারলাম যে, অর্থ দিয়ে কাফফারা দেয়ায় সেটা আদায় হবে না, খাদ্য দিয়ে কাফফারা আদায় করতে হয়। এখন প্রশ্ন হচ্ছে- আমরা কি তাহলে পুনরায় কাফফারা আদায় করব? এবং সেটার পরিমাণ কত?
উত্তর :
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
এক :
মালেকী,শাফেয়ী ও হাম্বলী মাজহাবের জমহুর (অধিকাংশ) আলেমের মতানুযায়ী অর্থদানের মাধ্যমে রোযার ফিদিয়া আদায় যথেষ্ট নয়। বরং ওয়াজিব হল খাদ্যদানের মাধ্যমে রোযার ফিদিয়া আদায় করা। যেহেতু আল্লাহ তাআলা বলেছেন: “আর যাদের জন্য তা (সিয়াম পালন) কষ্টকর হবে, তাদের কর্তব্য ফিদিয়া তথা একজন দরিদ্রকে খাবার প্রদান করা।”[সূরা বাক্বারাহ, ২ :১৮৪] ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু আনহুমা এ আয়াতের তাফসিরে বলেছেন: “আয়াতে উদ্দেশ্য হচ্ছে- অশীতিপর বৃদ্ধ ও বৃদ্ধাযারা রোযা পালনে অক্ষম। তাঁরাউভয়ে প্রতিদিনের বদলেএকজন মিসকীন খাওয়াবেন।”[এটি বর্ণনা করেছেন ইমাম বুখারি (৪৫০৫)]
‘ফাতাওয়াল লাজনাদ্ দায়িমা (১০/১৯৮) তে এসেছে: “যখন ডাক্তারগণ এই সিদ্ধান্ত দেন যে আক্রান্ত রোগের কারণে আপনি রোযা পালন করতে পারবেন না এবং এ রোগ থেকে সুস্থতাও আশা করা যায় না তখন আপনাকে বিগত ও আগত মাসগুলোর প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়াতে হবে, যার পরিমাণ হল দেশীয় খাদ্যদ্রব্য যেমন খেজুর বা অন্য কোন খাদ্যের অর্ধ স্বা’। আপনি যদি ছুটে যাওয়া দিনগুলোর সম সংখ্যক দিন একজন মিসকীনকে রাতের বা দুপুরের খাবার খাইয়ে থাকেন তবে তা যথেষ্ট হবে। কিন্তু অর্থদানের মাধ্যমে ফিদিয়া দিলে সেটা যথেষ্ট হবে না।”সমাপ্ত।
অতএব বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তি অথবা এমন রোগী যার সুস্থতা আশা করা যায় না তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকীন খাওয়াবেন। এর পরিমাণ স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য যেমন গম, খেজুর, অথবা চাল ইত্যাদি এর অর্ধ স্বা’। অর্ধ স্বা প্রায় ১.৫ কিঃগ্রাঃ এর সমান। [দেখুন- ফাতাওয়া রমজান, পৃষ্ঠা- ৫৪৫]
তিনি চাইলে পুরো মাসের ফিদিয়া মাস শেষে একসাথেও আদায় করতে পারেন। যেমন ধরুন একমাসের ফিদিয়া হবে- ৪৫ কিলোগ্রাম চাল। তিনি যদি রান্নাবান্নার ব্যবস্থা করে মিসকীনদেরকে দাওয়াত করে খাওয়ান সেটা আরো ভাল। কারণ আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু এমনটি করতেন।
দুই: আপনারা যদি কোন আলেমের ফতোয়ার উপর ভিত্তি করে অর্থের দ্বারা ফিদিয়া আদায় করে থাকেন তবে এ ফিদিয়া পুনরায় আদায় করতে হবে না। আর যদি আপনারা কাউকে জিজ্ঞেস না করে নিজেরাই তা করে থাকেন তবে সে ক্ষেত্রে ওয়াজিব হবে পুনরায় খাদ্যের মাধ্যমে ফিদিয়া আদায় করা। এটি অধিকতর সতকর্তা অবলম্বিত ফতোয়া এবং আপনাদের বাবার দায়মুক্তির ক্ষেত্রে অধিক নিরাপদ। আল্লাহ্ আপনাদের বাবাকে রহম করুন ও তাঁকে ক্ষমা করে দিন।
আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।
==================================
রোযার ফিদিয়া কি অমুসলিমকে খাওয়ানো যাবে?
প্রশ্ন :
একজন অসুস্থ ব্যক্তির উপর রোযার ফিদিয়া ওয়াজিব হয়েছে। এই ফিদিয়ার খাদ্য কি অমুসলিমদের প্রদান করা জায়েয হবে? কারণ সে ব্যক্তি একটি অমুসলিম দেশে বাস করে।
উত্তর :
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
“যদি অমুসলিম দেশে বসবাসকারী কারো উপর রোযার ফিদিয়া ওয়াজিব হয় এবং সে দেশে ফিদিয়া গ্রহণের হকদার কোন মুসলিম পাওয়া যায় তিনি তাদেরকে ফিদিয়ার খাদ্য খাওয়াবেন। আর যদি সে দেশে এ রকম কাউকে পাওয়া না যায় তাহলে অন্য মুসলিম দেশে দান করবেন; যে দেশের মুসলমানদের এই খাদ্যের প্রয়োজন রয়েছে। আল্লাহই সবচেয়ে ভালো জানেন।” সমাপ্ত। [মাজমূ ফাতাওয়া ইবনে উছাইমীন (ইবনে উছাইমীনের ফতোয়া সংকলন), ফাতাওয়াস্ সিয়াম (১১২)]
====================================
এক ব্যক্তির দাদী অসুস্থ ও বেহুঁশ। রোযা পালন না করার কারণে কি তাঁকে কাফ্ফারা দিতে হবে
প্রশ্ন :
প্রায় দেড় বছর ধরে আমার দাদী/নানী অসুস্থ। তাঁর হুঁশ নেই, তিনি কথা বলতে পারেন না এবং খাবারদাবারও চান না। যদি আমরা তাঁকে কোন খাবার দেই তবে তিনি খান। তাঁর সাথে কেউ কথা বললে তিনি কদাচিৎ তাকে চিনতে পারেন। তাঁর যা প্রয়োজন সেটাও তিনি আমাদেরকে বলেন না।[যেমন ধরুন তিনি বলেন না যে, আমি টয়লেটে যাব। আল্লাহ আপনাদেরকে সম্মানিত করুন**] তাঁর অবস্থা হলো- তিনি কোন নড়াচড়া ছাড়া বিছানার উপর ঘুমিয়ে থাকেন। তাঁর ছেলেরা তাঁকে নড়াচড়া করতে সাহায্য করে। আমি তাঁর সিয়াম ও সালাতের ব্যাপারে জানতে চাই। আমরা কি তাঁর পক্ষ থেকে ফিদিয়া আদায় করব এবং ইতিপূর্বে গত অবস্থার জন্য আমাদের কোন করণীয় আছে কী?
[** আরবী ভাষাভাষীরা অপবিত্র জিনিস যেমন জুতো, টয়লেট ইত্যাদির কথা উল্লেখের পর সাধারণত “আল্লাহ আপনাদের সম্মানিত করুন” এই দু‘আটি উল্লেখ করে থাকে।]
উত্তর :
সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য।
যিনি বয়সের ভারে দেহ ও মনের চরম অবনতির পর্যায়ে পৌঁছে গেছেন, তাঁর বিবেক-বুদ্ধি লোপ পেয়ে গেছে, হুঁশ থাকে না এমন ব্যক্তি নামায-রোযার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি পেয়ে যান। তাঁর উপর কোন কাফ্ফারা আদায় করাও আবশ্যক নয়। কারণ মুকাল্লাফ (শরয়ি দায়িত্বপ্রাপ্ত) হওয়ার জন্য শর্ত হচ্ছে বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া।
নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন :“তিন ব্যক্তির উপর থেকে (দায়িত্বের) কলম উঠিয়ে নেয়া হয়েছেঃ (১) ঘুমন্ত ব্যক্তি জাগ্রত হওয়া পর্যন্ত (২) শিশু বালিগ হওয়া পর্যন্ত এবং (৩) পাগল বিবেকবুদ্ধি ফিরে পাওয়া পর্যন্ত ।”[আবু দাউদ (৪৪০৩), তিরমিযী ( ১৪২৩), নাসা’ঈ (৩৪৩২), ইবনে মাজাহ (২০৪১)] আবু দাউদ বলেছেন: “এ হাদিসটি বর্ণনা করেছেন ইবনে জুরাইজ ক্বাসিম ইবনে ইয়াজিদ হতে, তিনি আলী রাদিয়াল্লাহু আনহুহতে, তিনি নবী সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম হতে এবং এ বর্ণনাতে তিনি وَالْخَرِفِ (বয়োবৃদ্ধ) শব্দটি যোগ করেছেন। শাইখ আলবানী এই হাদিসটিকে ‘সহীহ আবু দাউদ’ গ্রন্থে সহীহ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন।
আউনুল মাবুদ গ্রন্থে বলেছেন:
“আলখারিফ” শব্দটি “আলখারাফ” শব্দ হতে উদ্ভূত। এর অর্থ হলো বার্ধক্যের কারণে বুদ্ধি লোপ পাওয়া। হাদিসে এ শব্দটির অর্থ হলো অতিশয় বৃদ্ধব্যক্তি, বার্ধক্যের কারণে যার বুদ্ধি-বৈকল্য ঘটেছে। অতি বৃদ্ধ ব্যক্তির কখনো কখনো বুদ্ধিভ্রম হতে পারে। যার ফলে তিনি ভালমন্দ বিচার করতে পারেন না। এমতাবস্থায় তিনি আর মুকাল্লাফ (দায়িত্বপ্রাপ্ত) বলে বিবেচিত হন না। এ অবস্থাকে পাগলামিও বলা যায় না। সমাপ্ত
শাইখ ইবনে উছাইমীন রাহিমাহুল্লাহ বলেছেন:
“নিম্নোক্ত শর্ত ব্যতিরেকে কারো উপর রোযা পালন করা ওয়াজিব হয় না:
১. বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া
২. সাবালগ হওয়া
৩. ইসলাম
৪. সক্ষমতা থাকা
৫. সংসারী (মুকিম) হওয়া, সফরে না থাকা
৬. নারীদের ক্ষেত্রে হায়েয ও নিফাস মুক্ত হওয়া
প্রথম শর্ত:
বিবেকবুদ্ধি সম্পন্ন হওয়া। এর বিপরীত হল বুদ্ধি-বৈকল্য হওয়া। তা পাগলামির কারণে হোক বা বার্ধক্যজনিত অক্ষমতার কারণে হোক অথবা কোন দুর্ঘটনার কারণে বোধশক্তি ও অনুভুতিশক্তি লোপ পেয়ে যাক। বিবেকবুদ্ধি লোপ পাওয়ার কারণে এ ব্যক্তির উপর কোন শরয়ি দায়িত্ব বর্তায় না। এর উপর ভিত্তি করে বলা যায় যে, বৃদ্ধ ব্যক্তি যদি বার্ধক্যজনিত অক্ষমতার চরম পর্যায়ে পৌঁছে তবে তাঁর উপর রোযা বা ফিদিয়া প্রদান করার দায়িত্ব বর্তায় না। কারণ তাঁর বিবেকবুদ্ধি অনুপস্থিত।” সমাপ্ত [লিক্বাউল বাবিল মাফতূহ ( ৪/২২০)]
পক্ষান্তরে ইতিপূর্বে যা গত হয়েছে সে সময়ের ক্ষেত্রে উনার অবস্থা যদি এমনই হয়ে থাকে যে উনার কোন জ্ঞান বা উপলব্ধি ছিল না তবে তাঁর উপর কোন সিয়াম বা কাফ্ফারা নেই। আর যদি তাঁর জ্ঞান ও বোধশক্তি থেকে থাকে কিন্তু রোগের কারণে সিয়াম ত্যাগ করে থাকেন সেক্ষেত্রে দুটি অবস্থা হতে পারে :
(১) যদি সে সময় তাঁর রোগমুক্তির আশা ছিল। কিন্তু তিনি সুস্থ না হয়ে রোগ আরো দীর্ঘায়িত হয়। তবে তার উপর কোন কিছু বর্তায় না। কারণ তাঁর ওয়াজিব ছিল সুস্থ হওয়ার পর কাযা আদায় করা। কিন্তু তিনি তো আর সুস্থ হননি।
(২) আর যদি অবস্থা এমন হয় যে, সে সময়েও তার সুস্থ হওয়ার কোন আশা ছিল না তবে তার পক্ষ থেকে প্রতিদিনের পরিবর্তে কাফ্ফারা আদায় করা ওয়াজিব। কাফফরা হচ্ছে একজন মিসকীনকে অর্ধ সা‘ পরিমাণ স্থানীয় খাদ্যদ্রব্য প্রদান করা। আপনারা যদি এ কাফফারা আদায় না করে থাকেন তবে তাঁর সম্পদ থেকে তা আদায় করুন। আমরা আল্লাহ তা‘আলার কাছে তাঁর সুস্থতা ও রোগ নিরাময়ের দোয়া করছি এবং আপনাদের জন্য তাওফিক ও দৃঢ়তার প্রার্থনা করছি।
আল্লাহই সবচেয়ে ভাল জানেন।
প্রশ্ন: ৪৫৫ : গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের রোজা ।
প্রশ্ন: বেবীর বয়স ছয়মাস হওয়ার পূর্বেই রমজান চলে আসলে এবং মায়ের রোযা পালনের কারনে বাচ্চা যদি ঠিকমত দুধ খেতে না পায় তখন কাউকে টাকা দিয়ে যদি রোজা করে নেওয়া হয়, পরবর্তীতে কী তবুও কাযা রোজা গুলো করতে হবে? দলীল সহ উত্তর দিবেন আশা রাখি
উত্তর : জ্বী, পরবর্তীতে কাজা রোজাগুলো করতে হবে। কুরআন বলছে,
“তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে সে অন্যদিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে” [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫]
==============================================
যদি গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের রোজা রাখার দ্বারা তার স্বাস্থ্যের উপর কোন প্রভাব না পড়া। অর্থাৎ তার শরীর ও স্বাস্থ্যের জন্য রোজা রাখাটা ক্ষতিকরর না হয় । এবং তার সন্তানের জন্যেও আশংকাজনক না হয়। এমন নারীর উপর রোজা রাখা ফরজ। তার জন্য রোজা ভাঙ্গা নাজায়েয।
আর যদি গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী মায়ের রোজা রাখলে তার নিজের স্বাস্থ্য অথবা সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতি হওয়ার আশংকা হয় এবং তার জন্যে রোজা রাখাটা কষ্টকর হয়। এমন নারীর জন রোজা না-রাখা জায়েয আছে ; এ নারী রোজাগুলো পরবর্তীতে কাজা পালন করবেন। বরং এমন অবস্থায় নারীর জন্য রোজা না-রাখাই উত্তম। রোজা রাখা মাকরূহ।
দলিল হচ্ছে, আল্লাহর বাণী: “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি অসুস্থ হবে অথবা সফরে থাকবে সে অন্যদিনগুলোতে এ সংখ্যা পূর্ণ করবে” [সূরা বাকারা, আয়াত: ১৮৫] আর এ দুই শ্রেণীর অর্ন্তভূক্ত হবে গর্ভবতী ও দুগ্ধদানকারী নারী। অর্থাৎ তাদের নিজের ও সন্তানের স্বাস্থ্যের ক্ষতির আশংকা হয় ; তাহরে রোজা ভাঙ্গার অনুমতি আছে।
রাসূল সা : বলেন , “আল্লাহ তায়ালা মুসাফিরদের জন্য রোজা রাখতে বারণ করেছেন এবং নামাজের অংশ বিশেষ ছাড় দিয়েছেন, আর গর্ভবর্তী ও স্তন্যদানকারীর জন্য রোজা পালনের বাধ্য বাধকতা শিথিল করেছেন। ” তবে পরবর্তীতে ছুটে যাওয়া এ রোজাগুলোর কাজা আদায় করতে হবে ( তিরমিজি শরিফ )।
প্রশ্ন: ৪৫৪ : যে সকল দিনে রোযা রাখা নিষিদ্ধ
প্রশ্ন: মোট কতটি এবং কোন কোন দিন রোজা রাখা হারাম?
উত্তর: যে সকল দিন রোযা রাখা হারাম তা নিম্নরূপ:১) ঈদুল ফিতর (রামাযানের ঈদ) এর দিন।
২) ঈদুল আযহা (কুরবানী) এর দিন।
৩) ঈদুল আযহার এর পরে আরো তিন দিন। অবশ্য তামাত্তু বা কিরানকারী হাজিগণ যদি কোনও কারণে কুরবানী দিতে অপারগ হয় তাহলে এর পরিবর্তে মক্কায় যিলহজ্জ মাসের ১১, ১২ ও ১৩ তারিখে রোজা রাখবে। (আর নিজ গৃহে ফিরে এসে আরো ৭টি রাখবে)
৪) বিরামহীনভাবে সারা বছর রোজা থাকা।
কেউ সারা বছর নফল রোযা রাখতে চাইলে তার করণীয় হল, বিরামহীন ভাবে না রেখে এক দিন পরপর রাখা। এটি ছিল দাউদ আ. এর আদর্শ। রাসূল সা. এটিকে সর্বোত্তম পদ্ধতি হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।৫) নির্দিষ্ট করে কেবল শুক্রবার রোজা থাকা। অবশ্য এর আগে বা পরে মিলিয়ে দুটি রোযা রাখা যাবে। (তবে কারও যদি কর্মব্যস্ততা বা কোন কারণে অন্য দিন রোযা রাখা সম্ভব না হয় তাহলে সে কেবল শুক্রবারে নফল রোযা রাখতে পারে। তবে চেষ্টা করবে এর আগে বা পরে আরেকটি রোযা রাখার যদি সম্ভব হয়। সম্ভব না হলে সমস্যা নেই ইনশাআল্লাহ)
৬) অনুরূপভাবে শাবান মাসের ৩০ তারিখে যদি রমাযানের চাঁদ উদিত হওয়ার ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য নিশ্চয়তা না পাওয়া তবে সে দিন রোজা থাকা নিষিদ্ধ।এটিকে ইয়ামুশ শাক বা সন্দেহের দিন বলা হয়। কারণ সে দিন সন্দেহ থাকে যে, এটি কি শাবান মাসের ৩০ তারিখ না কি রামাযান মাসের ১ম তারিখ? তাই সে দিন রোযা থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
আল্লাহু আলাম।
———
উত্তর প্রদানে:
আব্দুল্লাহিল হাদী বিন আবদুল জলীল
দাঈ, জুবাইল দাওয়াহ এন্ড গাইডেন্স সেন্টার, সউদী আরব
প্রশ্ন: ৪৫৩ : রোজা অবস্থায় কানে বা নাকে পানি যাওয়া ।
প্রশ্ন: (ক) গত বছর রমজানে একদিন অজু করার সময় কুলি করতে গিয়ে হঠাৎ আমার গলায় একটু পানি চলে যায় আমি তখন আমাদের মহল্লার ইমাম সাহেব হুজুরকে মাসয়ালাটি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে তিনি বললেন আপনার রোজা ভেঙ্গে গেছে। আপনাকে একটি রোজা কাজা করতে হবে। তবে কাফফারা লাগবে না। এখন আমার জানার বিষয় হলো ঐ ইমাম সাহেব কি আমাকে মাসয়ালাটির সঠিক সমাধান দিয়েছেন?
(খ) জনাব মুফতি সাহেবের কাছে আমার আরও একটি জিজ্ঞাসা যে, অজু-গোসলের সময় যদি কারও নাক বা কান দিয়ে ইচ্ছাকৃতভাবে বা ভুলে পানি চলে যায় অথবা কেউ যদি নাক, কান বা চোখে ড্রপ, স্প্রে, কোনো ধরনের ওষুধ ব্যবহার করে তাহলে এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে কি না? ইসলামি আইনে এর সঠিক সমাধান কী? তা জানতে চাই। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন!
উত্তর: (ক) হাঁ, মহল্লার ঐ ইমাম সাহেব আপনাকে মাসয়ালার সঠিক সমাধানই দিয়েছেন। অজু বা গোসলের সময় রোজার কথা স্মরণ থাকাবস্থায় অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। এজন্য অজু-গোসলের সময় গড়গড়াসহ কুলি করা উচিত নয়।
হজরত সুফিয়ান সাওরি রহ. বলেন, ‘রোজা অবস্থায় কুলি করতে গিয়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে গলার ভেতর পানি চলে গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে এবং তা কাজা করতে হবে। (মুসান্নাফে আবদুর রাযযাক, হাদিস : ৭৩৮০)
উত্তর: (খ) রোজা অবস্থায় চোখে ঔষধ দেওয়াতে কোনো আপত্তি নেই। যদিও গলায় তার প্রতিক্রিয়া অনুভব হয়। (ফাতাওয়া হিন্দিয়া ২/১৮- পাকিস্তানি নুসখা)
রোজা অবস্থায় কানের ভেতর তেল, ড্রপ বা অন্য কোনো ওষুধ ব্যবহার করা যাবে এর দ্বারা রোজা ভাঙ্গবে না। তদ্রæপ কানের ভেতর পানি চলে গেলেও রোজা ভাঙ্গবে না। তবে কানে তেল প্রবেশ করার ক্ষেত্রে যদি তেল পেটে ঢুকে যায় তাহলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। (ইলমুল ফিকহ ৩/৩২)
রোজার কথা স্মরণ থাকা অবস্থায় ভুলক্রমে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে নাক দিয়ে মস্তিষ্ক পর্যন্ত পানি পৌঁছালে রোজা ভঙ্গ হবে না। তবে খাদ্যনালী পর্যন্ত পৌঁছে গেলে রোজা ভঙ্গ হয়ে যাবে। এজন্য রোজা অবস্থায় অজু-গোসল করার সময় নাকের নরম স্থানে পানি না পৌঁছানো। কারণ এতে করে রোজা ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
হজরত লাকিত ইবনে সাবিরা রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘(অজু গোসলের সময়) ভালোভাবে নাকে পানি দাও তবে রোজা অবস্থায় নয়।’ (সুনানে আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৬৩)
এমনিভাবে নাকে ড্রপ, স্প্রে, ঔষধ, তেল ইত্যাদি ব্যবহারে রোজার ক্ষতি হয় না। অবশ্য এ ক্ষেত্রে সতর্ক থাকতে হবে, যেন গলায় না চলে যায়। গলায় গেলে রোজা ভেঙ্গে যাবে। অবশ্য গলায় না গেলে বা স্বাদ অনুভূত না হলে রোজা ভাঙ্গবে না। (আদ্দুররুল মুখতার ২/৩৯৬; ফিকহুন নাওয়াযিল ২/২৯৭; ইমদাদুল ফাতাওয়া ১/১৭২; মাজাল্লাতু মাজমাইল ফিকহিল ইসলামী, দশম সংখ্যা ২/৪৫৪)
উত্তরদানে: মুফতি নূর মুহাম্মদ রাহমানী, উসতাযুল হাদিস জামিয়া আরাবিয়া দারুল উলূম বাগে জান্নাত
৪৩ নবাব সলিমুল্লাহ রোড, চাষাড়া, নারায়ণগঞ্জ।
-এটি
প্রশ্ন: ৪৫২। মহিলাদের ইদ্দত ।
১।
কোনো স্বামী যদি তার স্ত্রীকে তালাক প্রদান করে থাকে তাহলে তার ইদ্দত হলো তিন মাসিক পর্যন্ত। আল্লাহ তা’আলা বলেন-
‘‘আর তালাকপ্রাপ্ত নারী নিজেকে অপেক্ষায় রাখবে তিন মাসিক পর্যন্ত।’’ (সূরা বাকারা,আয়াতঃ ২২৮)
২।
জাহেলি যুগে স্বামীর মৃত্যুর পর এক বছর পর্যন্ত নারী অন্য কোথাও বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে পারত না এবং বাড়ির বাইরেও যেতে পারত না। এ নিয়ম চালু থাকায় মানুষ সমস্যার সম্মুখীন হতো। আল্লাহ তাআলা এ বিধান সহজ করে দিয়েছেন। এক বছরের পরিবর্তে শুধু চার মাস ১০ দিনের ইদ্দত নির্ধারণ করেছেন। এ বিষয়ে পবিত্র কোরআনে এসেছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা স্ত্রী রেখে মৃত্যুমুখে পতিত হয়, তাদের স্ত্রীরা চার মাস ১০ দিন প্রতীক্ষায় থাকবে...।’ (সুরা : বাকারা, আয়াত : ২৩৪)
================================================================
১৯৬৮. প্রশ্ন এক মহিলার স্বামী মারা যাওয়ায় সে ইদ্দত পালন করছে। এ অবস্থায় কি সে নাকফুল পরতে পারবে? রঙিন কাপড় পরতে পারবে? চুল আচড়াতে পারবে? একজন বললেন, চুল আচড়ানো নিষেধ। তাহলে এত লম্বা চুল না আচড়ালে তো জট বেঁধে যাবে? বিস্তারিত জানিয়ে বাধিত করবেন।
উত্তর: স্বামী মারা গেলে স্ত্রীর জন্য ইদ্দত অবস্থায় সকল প্রকার সাজসজ্জা ত্যাগ করা জরুরি। তাই অলংকার পরা যাবে না। এমনকি নাকফুলও খুলে রাখতে হবে। আর রঙিন সাধারণ ব্যবহৃত কাপড় পরতে পারবে। সাদা কাপড় পরা বাধ্যতামূলক নয়। তবে পুরাতন কাপড় থাকলে নতুন কাপড় পরবে না। তদ্রূপ ঝলমলে কাপড় থেকেও বিরত থাকবে। সৌন্দর্যের উদ্দেশ্যে চুল আচড়াতে পারবে না। তবে চুলের স্বাভাবিকতা রক্ষা করার জন্য আচড়ানোর প্রয়োজন হলে তা পারবে। এটা নিষিদ্ধ নয়।
সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২৩০৪; মুসনাদে আহমদ ৬/৩০২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৩; তাবয়ীনুল হাকায়েক ৩/২৬৬
৩৩৬০. প্রশ্ন. আমাদের সমাজে নারীদেরকে স্বামীর মৃত্যুর পর তার জন্য শোক প্রকাশার্থে সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকতে দেখা যায়। তাছাড়া বিধবা নারীদের সাদা কাপড় পরিধান করার প্রচলন প্রায় সব অঞ্চলেই আছে। অনেকে এটিকে শুধু একটি সামাজিক প্রথা মনে করে থাকে। আবার অনেকে এটিকে শরীয়তের বিধান মনে করলেও এ ব্যাপারে এতটা যত্নশীল নয়। তদ্রূপ অনেকে এসব বিষয়কে কুসংস্কার বলেও মন্তব্য করে থাকে। জানার বিষয় হল, আসলে এ বিষয়ে শরীয়তের নির্দেশনা কী? স্বামীর মৃত্যুর পর একজন স্ত্রীর এ ব্যাপারে করণীয় কী?
উত্তর: স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীর ইদ্দতকালীন সময় (অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত অন্যথায় ৪ মাস ১০ দিন) সব ধরনের সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা ওয়াজিব বিধান।
সহীহ বুখারীতে উম্মে হাবীবা রা. থেকে বর্ণিত আছে, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি যে, আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী কোনো নারীর জন্য তার স্বামী ব্যতীত অন্য কারো মৃত্যুতে তিনদিনের বেশি সময় হিদাদ (শোক করা ও সাজসজ্জা থেকে বিরত থাকা) বৈধ নয়। আর স্বামীর মৃত্যুতে ৪ মাস ১০ দিন হিদাদ পালন করবে।-সহীহ বুখারী, হাদীস : ৫৩৩৪
উম্মে সালামা রা. হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে স্ত্রী লোকের স্বামী মৃত্যুবরণ করে সে যেন ইদ্দতকালীন সময়ে রঙিন এবং কারুকার্যমণ্ডিত কাপড় ও অলংকার পরিধান না করে। আর সে যেন খিযাব ও সুরমা ব্যবহার না করে।-সুনানে আবু দাউদ, হাদীস : ২২৯৮
আল্লামা কুরতুবী রাহ. তার বিখ্যাত তাফসীরগ্রন্থ ‘আলজামে লিআহকামিল কুরআন’ও ইদ্দত সংক্রান্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় লেখেন, হিদাদ পালনের অর্থ হল, মহিলা তার ইদ্দতকালীন সুগন্ধি, সুরমা, মেহেদি,অলঙ্কারাদিসহ পোশাক-আশাকের ক্ষেত্রে যাবতীয় সাজসজ্জা ত্যাগ করবে। -আল জামে’ লিআহকামিল কুরআন, কুরতুবী ৩/১১৮
সুতরাং কোনো মহিলার স্বামী মারা যাওয়ার পর ৪ মাস ১০ দিন অথবা অন্তঃসত্ত্বা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত যে কোনো ধরনের সাজসজ্জা যা উৎসবাদিতে পরা হয় এমন চাকচিক্যপূর্ণ পোশাক পরিধান করা,সুগন্ধি ও অন্যান্য সাজসজ্জার প্রসাধনী ব্যবহার করা নিষিদ্ধ। তদ্রƒপ মেহেদি লাগানো, সুরমা দেওয়া থেকেও বিরত থাকা আবশ্যক। অবশ্য ব্যবহৃত রঙিন কাপড় যদি চাকচিক্যপূর্ণ না হয় তাহলে তা পরিধান করতে কোনো অসুবিধা নেই।
ইদ্দত অবস্থায় সাদা কাপড় পরা আবশ্যক নয়। বরং সাদা কাপড় পরিধান করাকে জরুরি মনে করা ঠিক নয়।
প্রকাশ থাকে যে, ইদ্দত অবস্থায় মহিলার জন্য সাজগোজ ত্যাগ করার বিধান একাধিক হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। এ ব্যাপারে হাদীসে অত্যন্ত গুরুত্ব এসেছে। এটি শরীয়তের গুরুত্বপূর্ণ বিধান। সুতরাং একে সামাজিক প্রথা বা কুসংস্কার মনে করা অন্যায়। বরং আল্লাহ এবং পরকালে বিশ্বাসী সকল মুসলমানের উচিত উক্ত বিধানের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়া। নারীদের কর্তব্য উক্ত বিধান পালনে যত্নশীল হওয়া।
-আলমাবসূত, সারাখসী ৬/৫৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩০-৫৩২; মিরকাতুল মাফাতীহ ৬/৪৫২; তাকমিলাতু ফাতহিল মুলহিম ১/২৩১; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩৩০; ফাতহুল বারী ৯/৪০১, ৩৯৫
৩৭৫১. প্রশ্ন. গত রবিউল আওয়াল মাসের নয় তারিখে আমার আব্বু মারা যান। আর আমার আম্মু জীবিত আছেন। আর আমরা জানি,স্বামী মারা যাওয়ার পর চার মাস দশ দিন ইদ্দত পালন করতে হয়। এখন প্রশ্ন হল, আব্বু যেহেতু মাসের কয়েক দিন অতিবাহিত হওয়ার পর ইন্তেকাল করেছেন তাই এ অবস্থায় চার মাস দশ দিনের হিসাব কীভাবে করবে?
উত্তর: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার আব্বার মৃত্যু যেহেতু মাস শুরু হওয়ার পর হয়েছে তাই আপনার আম্মা এক শত ত্রিশ দিন ইদ্দত পালন করবেন। এক্ষেত্রে মাসের হিসাব ধর্তব্য হবে না।
-ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫২২; ফাতাওয়া খানিয়া ১/৫৪৯-৫৫০; বাদায়েউস সানায়ে ৩/৩১০; আলমুহীতুল বুরহানী ৪/২২৭; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৩২
৩৭৫৩ . প্রশ্ন. আমার স্বামী আমাকে নিয়ে তার শশুরালয়ে অর্থাৎ আমার পিতার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। ঘটনাক্রমে সেখানেই তার ইন্তেকাল হয়ে যায়। এখন হুযুরের নিকট আমার জানার বিষয় হল, আমি স্বামীর মৃত্যুর ইদ্দত কোথায় পালন করব? আমার স্বামীর বাড়িতে না পিতার বাড়িতে? দয়া করে উত্তরটা জানালে উপকৃত হব।
উত্তর: প্রশ্নোক্ত ক্ষেত্রে আপনার পিত্রালয়ে স্বামীর মৃত্যু হলেও আপনাকে স্বামীর বাড়িতেই ইদ্দত পালন করতে হবে।
কেননা ইদ্দত স্বামীর বাড়িতেই পালন করা জরুরি। একটি দীর্ঘ হাদীসে এসেছে যে, এক মহিলার স্বামী ইন্তেকাল করলে সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট নিজের পিত্রালয়ে চলে যাওয়ার অনুমতি চায়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন,
امْكُثِي فِي بَيْتِكِ حَتَّى يَبْلُغَ الكِتَابُ أَجَلَهُ.
তুমি ইদ্দত শেষ হওয়া পর্যন্ত তোমার (স্বামীর) ঘরেই অবস্থান কর। -জামে তিরমিযী, হাদীস ১২০৪
আর ইদ্দত হচ্ছে চার মাস দশদিন অথবা অন্তসত্তা হলে সন্তান ভূমিষ্ঠ হওয়া পর্যন্ত।
-সূরা বাকারা (২) : ২৩৪; সূরা তালাক (৬৫) : ৪; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫৪; ফাতাওয়া হিন্দিয়া ১/৫৩৫; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৯; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬
৪১৬৩. প্রশ্ন. আমরা জানি, স্বামীর মৃত্যুর পর চার মাস দশদিন স্ত্রীকে ইদ্দত পালন করতে হয়। এ সময় বিশেষ কিছু বিধান তার মেনে চলতে হয়। তন্মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্য একটি বিধান হল, এ সময় সে অন্যত্র বিয়ে করতে পারে না। কিন্তু আমাদের সমাজে দেখা যায়, মেয়েকে উপযুক্ত মনে হলে ইদ্দতের মধ্যেই কাবিন নামা তৈরি করে রাখা হয়। এবং ইদ্দত শেষে বিয়ের বাকি কাজ সম্পন্ন হয়। এখন প্রশ্ন হল, এভাবে ইদ্দতের মধ্যেই কাবিননামা লিখে রাখা শরীয়তের দৃষ্টিতে জায়েয হবে কি?
উত্তর: ইদ্দতের মধ্যে সুস্পষ্ট ভাষায় বিয়ের প্রস্তাব দেওয়াই নাজায়েয। সেখানে একেবারে কাবিননামা তৈরি করে ফেলা আরো মারাত্মক অন্যায় ও গুনাহের কাজ। কুরআনে কারীমে এসেছে, আল্লাহ পাক বলেন,
وَ لَا تَعْزِمُوْا عُقْدَةَ النِّكَاحِ حَتّٰی یَبْلُغَ الْكِتٰبُ اَجَلَهٗ
আর যতক্ষণ পর্যন্ত তারা ইদ্দতের নির্দিষ্ট মেয়াদ উত্তীর্ণ না করে ততক্ষণ পর্যন্ত বিবাহের আকদ পাকা করার ইচ্ছাও করো না। -সূরা বাকারা (২) : ২৩৫
সুতরাং ইদ্দতের মধ্যে কাবিননামা লিখে রাখা যাবে না। তবে ইশারা-ইঙ্গিতে বিয়ের ইচ্ছা প্রকাশ করা যেতে পারে। আল্লাহ পাক বলেন,তোমরা স্ত্রীলোকদের বিয়ের প্রস্তাব সম্বন্ধে ইঙ্গিতে যা ব্যক্ত কর অথবা নিজেদের মনে গোপন রাখ,তাতে তোমাদের কোন দোষ নেই। (সূরা বাকারা (২) : ২৩৫) প্রকাশ থাকে যে, কাবিননামা হচ্ছে বিবাহের নিবন্ধন ফরম যা বিবাহ সংঘটিত হওয়ার পর পূরণ করা নিয়ম। বিবাহের পূর্বে তা পূরণ করলে অনেক মিথ্যার আশ্রয় নিতে হবে। তাই এহেন কাজ থেকে বিরত থাকা আবশ্যক।
-শরহু মুখতাসারিত তহাবী ৪/৩৪১; বাদায়েউস সনায়ে ৩/৩২৩; আহকামুল কুরআন, জাস্সাস ১/৪২২; আলবাহরুর রায়েক ৪/১৫১; ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৫
৩৫৯৯. প্রশ্ন. বাবার মৃত্যুর পর আমার মা ইদ্দত পালন করছেন না। তিনি বিভিন্ন সময় বিভিন্ন কাজে বাসার বাইরে চলে যান। তাকে বললে তিনি শোনেন না। তাই ইদ্দত পালন না করলে কী আযাব এবং জাহান্নামের ভয়াবহতা রয়েছে তা জানতে চাই। যাতে করে আমার মাকে জানালে তিনি সঠিকভাবে ইদ্দত পালন করতে পারেন।
উত্তর: স্বামীর মৃত্যুর পর থেকে চার মাস দশ দিন স্ত্রীর জন্য নিজ গৃহে ইদ্দত পালন করা শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ ওয়াজিব বিধান। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেছেন, (তরজমা) তোমাদের মধ্যে যারা মৃত্যুবরণ করে এবং স্ত্রীদেরকে রেখে যায়, উক্ত স্ত্রীগণ নিজেদেরকে চার মাস দশ দিন প্রতীক্ষায় রাখবে (ইদ্দত পালন করবে)। -সূরা বাকারা (২) : ২৩৪
খুসাইফ রাহ. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি সায়ীদ ইবনুল মুসাইয়্যিব রাহ.-কে জিজ্ঞাসা করলাম,যে মহিলার স্বামী মারা গেছে সে (ইদ্দত অবস্থায়) কি ঘর থেকে বের হতে পারবে? তিনি বললেন,না। -মুসান্নাফ ইবনে আবী শাইবা, হাদীস ১৯১৯৮
সুতরাং বিনা ওজরে ঘর থেকে বাইরে যাওয়া জায়েয হবে না। আর শরীয়তের হুকুমের লঙ্ঘন করাই পাপ। আর পাপ বলতেই ঈমানের উন্নতির পথে বাধা এবং আখেরাত ও কবরের যিন্দেগী সুখময় হতে বাধা। মুমিনের জন্য শুধু এতটুকু কথাই কোনো ফরয-ওয়াজিব বিধান পালনের জন্য যথেষ্ট।
অবশ্য জীবিকা কিংবা অন্য কোনো মানবিক প্রয়োজনে দিনের বেলা বাইরে যাওয়ার অবকাশ আছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজন শেষ হওয়ার পর আবার বাড়িতে ফিরে আসা জরুরি। আর দিনে কোনো বিশেষ ওজরে বের হলেও রাতে অবশ্যই নিজ গৃহেই অবস্থান করতে হবে।
-ফাতহুল কাদীর ৪/১৬৬-১৬৭; আলমুহীতুল বুরহানী ৫/২৩৬; ফাতাওয়া তাতারখানিয়া ৫/২২৮; আদ্দুররুল মুখতার ৩/৫৩৬
প্রশ্ন: ৪৫১ : টিকটিকি / গিরগিটি মারা প্রসঙ্গে।
নাস্তিক প্রশ্নঃ
হাদিসে বলা হয়েছে ইব্রাহিমের (আ.) অগ্নিকুণ্ডে ফুঁ দেবার অপরাধে গিরগিটি মেরে ফেলতে হবে, কেউ যদি ১ম আঘাতে মেরে ফেলতে পারে, তাহলে তার জন্য অনেক পূণ্য। বহু যুগ আগের কোন এক গিরগিটির কাজের জন্য কেন এখনও গিরগিটি মেরে ফেলতে হবে? এটা কি একের দোষে অন্যকে শাস্তি দেয়া নয়? একজন স্রষ্টা কিভাবে নিরীহ গিরগিটি মেরে ফেলবার আদেশ দিতে পারেন?
উত্তরঃ
এ পৃথিবীর সবকিছুই আল্লাহ তা‘আলার সৃষ্টি - অতিকায় প্রাণী থেকে শুরু করে ক্ষুদ্রকায় ব্যাকটেরিয়া পর্যন্ত। গিরগিটিও আল্লাহ্ তা’আলার সৃষ্টি। কাজেই এর ব্যাপারে আল্লাহর কিছু সুনির্দিষ্ট হুকুম-আহকাম থাকবে এটাই স্বাভাবিক। শুরুতেই আমরা এই প্রাণীটির ব্যাপারে আল্লাহর বিধান দেখে নিই।
وَعَنْ أُمِّ شَرِيكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا : أَنَّ رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَهَا بِقَتْلِ الأَوْزَاغِ وَقَالَ: «كَانَ يَنْفُخُ عَلَى إِبْرَاهِيمَ». متفق عَلَيْهِ
অর্থঃ উম্মে শারীক রাদিয়াল্লাহু আনহা হতে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ‘ওয়াযাগ’ (গিরগিটি/Gecko) মারতে আদেশ দিয়েছেন এবং বলেছেন যে, ‘‘এ ইব্রাহিম(আ.) এর অগ্নিকুণ্ডে ফুঁ দিয়েছিল।” [1]
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَتَلَ وَزَغَةً فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ فَلَهُ، كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً، وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّانِيَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً، أَدْنَى مِنَ الْأُولَى، وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّالِثَةِ، فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً أَدْنَى مِنَ الثَّانِيَةِ صحيح
অর্থঃ আবু হুরাইরা(রা.) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতে একটি ‘ওয়াযাগ’ হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে এটি হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সাওয়াব রয়েছে, যা প্রথম আঘাতে মারার তুলনায় কম। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা দ্বিতীয় আঘাতে হত্যার চেয়ে কম। [2]
عَنْ سَائِبَةَ، - مَوْلاَةِ الْفَاكِهِ بْنِ الْمُغِيرَةِ - أَنَّهَا دَخَلَتْ عَلَى عَائِشَةَ فَرَأَتْ فِي بَيْتِهَا رُمْحًا مَوْضُوعًا فَقَالَتْ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ مَا تَصْنَعِينَ بِهَذَا قَالَتْ نَقْتُلُ بِهِ هَذِهِ الأَوْزَاغَ فَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَخْبَرَنَا أَنَّ إِبْرَاهِيمَ لَمَّا أُلْقِيَ فِي النَّارِ لَمْ تَكُنْ فِي الأَرْضِ دَابَّةٌ إِلاَّ أَطْفَأَتِ النَّارَ غَيْرَ الْوَزَغِ فَإِنَّهَا كَانَتْ تَنْفُخُ عَلَيْهِ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ بِقَتْلِهِ .
অর্থঃ ফাকিহা ইবনুল মুহীরার মুক্তদাসী সাইবা থেকে বর্ণিত, তিনি আয়িশা (রা.)-র নিকট প্রবেশ করে তাঁর ঘরে একটি বর্শা রক্ষিত দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনারা এটা দিয়ে কী করেন? তিনি বলেন, আমরা এই বর্শা দিয়ে এসব ‘ওয়াযাগ’ হত্যা করি। নিশ্চয়ই আল্লাহর নবী(ﷺ) আমাদের অবহিত করেছেন যে, ইব্রাহিম(আ.)-কে যখন অগ্নিকুণ্ডে নিক্ষেপ করা হলো তখন পৃথিবীর বুকে এমন কোন প্রাণী ছিলো না, যা আগুন নিভাতে চেষ্টা করেনি, ‘ওয়াযাগ’ ব্যতিত। সে বরং আগুনে ফুঁ দিয়েছিল। অতঃপর রাসুলুল্লাহ(ﷺ) এটিকে হত্যা করার নির্দেশ দেন। [3]
হাদিসে প্রাণীটির নাম হিসাবে ‘الْوَزَغِ’ (ওয়াযাগ) শব্দটি এসেছে। যা হচ্ছে টিকটিকি বা গিরগিটিজাতীয় এক ধরনের সরিসৃপ। কোনো কোনো অনুবাদক ‘টিকটিকি’ আবার কোনো কোনো অনুবাদক ‘গিরগিটি’ শব্দ দ্বারা অনুবাদ করেছেন। আমি এখানে ‘গিরগিটি’ অনুবাদটি ব্যবহার করছি। এই প্রাণীটির (Gecko) বহু প্রজাতি বিদ্যমান। [4]
এ হাদিসগুলো পড়ে কারো মনে প্রশ্ন জাগতে পারেঃ ইব্রাহিম(আ.) এর যুগে গিরগিটি যদি আগুনে ফুঁ দিয়েও থাকে, এই যুগে সে কারণে কেন গিরগিটি মারার জন্য পুরষ্কার ঘোষণা করা হচ্ছে?
হাদিসের ব্যাখ্যায় মুফতি তাকি উসমানী(হাফিযাহুল্লাহ) বলেন, “আল্লাহই সব থেকে ভালো জানেন, আমার কাছে এটা মনে হয়েছে যে – ইব্রাহিম(আ.) এর আগুনে ফুঁ দেয়ার ঘটনা গিরগিটির অনিষ্টকারী স্বভাব বোঝাতে বর্ণনা করা হয়েছে। সাথে এর নিচু প্রকৃতিও বোঝানো হয়েছে। একে মারতে আদেশ করার মূল কারণ হল, এটি ক্ষতিকর ও কষ্টদায়ক প্রাণী। নতুবা ইব্রাহিম(আ.) এর জমানায় ঐসকল গিরগিটির অন্যায়ের কারণে এ সকল গিরগিটিকে হত্যা করা, শাস্তি দেয়া যুক্তিসঙ্গত হতো না। এ জন্য মূল কারণ তাদের কষ্টদান ও অবাধ্যাচারণ। যার বহিঃপ্রকাশ ইব্রাহিম(আ.) এর ঘটনার সময়ে স্পষ্ট হয়ে যায়।” [5]
শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ(র.) এর মতে, “গিরগিটিকে হত্যা করা হবে কারণ সেটা কষ্টদানকারী প্রানী।” [6]
শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাঈমিন(র.) এর মতে, “মানুষকে যে সকল প্রাণী মারার আদেশ দেওয়া হয়েছে সেগুলো ইহরাম অবস্থায় ও ইহরাম ছাড়াও মারা হবে। যেমন, গিরগিটি, বিচ্ছু ইত্যাদি। হাদিসের মধ্যেই এসেছে যে এইগুলো কষ্টদানকারী প্রাণী। সীমালঙ্ঘনের (মানুষকে কষ্ট দানে) ক্ষেত্রে এদের কোন তুলনা নেই।” [7]
অন্যান্য উলামাদের থেকেও এমন ব্যাখ্যা পাওয়া যায়। [8] অতএব আমরা দেখলাম হাদিসের ব্যাখ্যাকারকদের মতে, গিরগিটি মারতে আদেশ দেবার মূল কারণ এর ক্ষতিকর প্রকৃতি। একের অপরাধে অন্যকে শাস্তি দেবার বিধান ইসলামে নেই, একের কর্মের ভার অন্য কেউ বহন করে না। আল্লাহ্ বলেন,
قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ ۚ وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ
অর্থঃ “বল, “আমি কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন প্রভু অনুসন্ধান করব, অথচ তিনি সব কিছুর প্রভু?” আর প্রত্যেক সত্তা স্বীয় কৃতকর্মের জন্য দায়ী হবে, কোনো ভারবহনকারী অন্যের ভার বহন করবে না। ...” [9]
مَّنِ اهْتَدَىٰ فَإِنَّمَا يَهْتَدِي لِنَفْسِهِ ۖ وَمَن ضَلَّ فَإِنَّمَا يَضِلُّ عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۗ وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا
অর্থঃ “যারা সৎ পথ অবলম্বন করবে তারা তো নিজেদেরই মঙ্গলের জন্য তা অবলম্বন করবে এবং যারা পথভ্রষ্ট হবে তারা তো পথভ্রষ্ট হবে নিজেদেরই ধ্বংসের জন্য এবং কেউ অন্য কারও ভার বহন করবে না; আমি [আল্লাহ্] রাসুল না পাঠানো পর্যন্ত কাউকেও শাস্তি দিইনা।” [10]
গিরগিটির (Gecko) অনিষ্টকর হবার ব্যাপারটি আধুনিক বিজ্ঞান দ্বারাও প্রমাণিত। আমেরিকান গবেষক Sonia Hernandez এ সংক্রান্ত ব্যাপারে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেখিয়েছেন যে, গিরগিটিতে এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া থাকে ( enteric bacteria) যেটি এন্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করতে পারে। [11] কোনো ব্যাকটেরিয়া যদি এন্টিবায়োটিককে প্রতিরোধ করতে পারে, তাহলে সেটি মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকি হয়ে উঠতে পারে। Sonia Hernandez- এর এই গবেষণা ‘Science of the Total Environment’ জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে। [12] গিরগিটি কামড় দেয় এবং এর দ্বারা ক্ষতিকর রোগ ছড়াতে পারে। [13] আমেরিকায় ঘর-বাড়ীতে গিরগিটি প্রতিপালনের চল রয়েছে। ২০১৫ সালে গৃহপালিত গিরগিটির দ্বারা সেখানকার ১৬টি অঙ্গরাজ্যে ভয়ানক salmonella ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ দেখা দেয়। [14] কাজেই গিরগিটিকে একেবারে ‘নিরীহ’ প্রাণী বলবার কোনো সুযোগ নেই।
এ ছাড়া ঘরোয়া টিকটিকির ক্ষতিকর দিক ও প্রতিকারের ব্যাপারে এই আর্টিকেলটি দেখা যেতে পারে।
হাদিসে ইব্রাহিম(আ.) এর আগুনে গিরগিটির ফুঁ দেবার ঘটনা উল্লেখ করা হয়েছে। কেউ কেউ এ দৃষ্টান্তটি দেখিয়ে দাবি করতে পারে যে, হাদিসে তো ‘কারণ’ হিসাবে ইব্রাহিম(আ.) এর আগুনে ফুঁ দেবার ঘটনা উল্লেখ আছে; ক্ষতিকর হওয়ার কথা তো বলা হয়নি! এর জবাবে আমরা বলবঃ গিরগিটির ক্ষতিকর প্রাণী হবার বিষয়টি অন্যত্র বিভিন্ন হাদিসে বর্ণিত হয়েছে।
عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ لِلْوَزَغِ " الْفُوَيْسِقَةُ "
অর্থঃ আয়িশা থেকে বর্ণিত। রাসুলুল্লাহ(ﷺ) ‘ওয়াযাগ’ (গিরগিটি/Gecko) সম্পর্কে বলেনঃ তা ক্ষতিকর প্রাণী। [15]
عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَسَمَّاهُ فُوَيْسِقًا صحيح
অর্থঃ আমির ইবনু সা‘দ (রহ.) থেকে তাঁর পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ(ﷺ) গিরগিটি মারার হুকুম করেছেন। তিনি এর নাম দিয়েছেন অনিষ্টকারী। [16]
কাজেই এ কথা বলার কোনো সুযোগ নেই যে বিনা কারণে গিরগিটি হত্যা করতে বলা হয়েছে। আর ইব্রাহিম(আ.) এর অগ্নিকুণ্ডে ফুঁ দেবার দৃষ্টান্ত উল্লেখের দ্বারাও এটা প্রমাণ হয় না যে ঐ সময়ের গিরগিটিদের কর্মের জন্য এখনকার গিরগিটিদের মারতে বলা হয়েছে।
একটা উদাহরণের দ্বারা বিষয়টি সহজে বোঝা যাবে। ধরা যাক, কোনো একটি ডাকাত দল বহু বছর ধরে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ করে যাচ্ছে। ডাকাত দলের কয়েক জন সদস্য ১০ বছর আগে একজন পুলিশ সদস্যকে হত্যা করে ফেললো। এটি তাদের একটি ভয়াবহ জঘন্য কর্ম হিসাবে দৃষ্টান্ত হয়ে গেল। ঘটনার ১০ বছর পরে তাদের অনিষ্টকর স্বভাবের বিবরণ দিয়ে উল্লেখ করা হলঃ “এই ডাকাত দলকে গ্রেপ্তার করতে হবে। এরা এমন লোক যারা পুলিশ মারে!” -- কেউ কি বলবে যে এই কথাটি ভুল?
কখনোই না। ডাকাত দলের সকল সদস্য হয়তো কাজটি করেনি, কাজটি হয়তো সাম্প্রতিক সময়েও হয়নি। কিন্তু বহু আগের ঐ কর্মটি তাদের ক্ষতিকর স্বভাবের একটি উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত হিসাবে স্বীকৃত হয়ে গেছে। এ কারণে তাদের ঐ বিশেষ কাজটিকে উদাহরণ হিসাবে উল্লেখ করে এভাবে তাদেরকে গ্রেপ্তারের কথা বলা যেতেই পারে।
একইভাবে, ইব্রাহিম(আ.) এর সময়ে করা গিরগিটির একটি অনিষ্টকর কাজকে বর্তমান সময়ের গিরটিগিটিদের বেলাতেও অনিষ্টকর স্বভাবে বোঝানোর জন্য ব্যবহার করা যেতেই পারে।
হাদিসে কেন এক আঘাতে মারলে বেশি সওয়াবের কথা বলা হল? এটি কি আসলেই গিরগিটির প্রতি নিষ্ঠুরতা প্রদর্শন?
সংশ্লিষ্ট হাদিসের ব্যাখ্যায় ইজজুদ্দিন বিন আব্দুস সালাম(র.) [৫৭৭-৬৬০ হি.] বলেছেন, “প্রথম আঘাতে (গিরগিটি) মারার আদেশ দেবার কারণ হল, তাকে এক আঘাতে হত্যা করা হলে উত্তম (সদয়)ভাবে হত্যা করা হবে এবং এই হাদিসের আওতায় আমল করা হবেঃ রাসুল(ﷺ) বলেছেন, ‘‘অবশ্যই আল্লাহ প্রত্যেক বস্তুর উপর অনুগ্রহ লিপিবদ্ধ (জরুরী) করেছেন। সুতরাং যখন হত্যা করো তখন উত্তমরূপে অনুগ্রহের সাথে হত্যা কর এবং যখন (পশু) যবেহ কর তখন উত্তমরূপে অনুগ্রহের সাথে যবেহ কর।’’ [সহীহ মুসলিম হা/১৯৫৫] ... ” [17]
অর্থাৎ এ আদেশের সাথে নিষ্ঠুরতার কোনো সম্পর্ক নেই বরং দয়ার সম্পর্ক আছে। ক্ষতিকর প্রাণী বিধায় গিরগিটিকে মারতে বলা হয়েছে। এর প্রতি জুলুম করার জন্য মারতে বলা হয়নি। একে মারলেও এমনভাবে মারতে হবে যাতে এর কষ্ট কম হয়।
ইসলাম দয়ার ধর্ম, শান্তির ধর্ম। মানুষ, পশু-পাখি সকল কিছুর প্রতি দয়া প্রদর্শন হচ্ছে ইসলামের বিধান। মানুষের জন্য একান্ত প্রয়োজন না হলে ইসলাম কোনো প্রাণী হত্যা করার বিধান দেয় না। পশু-পাখির প্রতি দয়া প্রদর্শনের ব্যাপারেও ইসলামের সুস্পষ্ট নির্দেশ আছে।
আল্লাহর রাসুল(ﷺ) বলেন, ‘‘এক ব্যক্তি এক কুয়ার নিকটবর্তী হয়ে তাতে অবতরণ করে পানি পান করল। অতঃপর উঠে দেখল, কুয়ার পাশে একটি কুকুর (পিপাসায়) জিহ্বা বের করে হাঁপাচ্ছে। তার প্রতি লোকটির দয়া হল। সে তার পায়ের একটি (চর্মনির্মিত) মোজা খুলে (কুয়াতে নেমে তাতে পানি ভরে এনে) কুকুরটিকে পান করাল। ফলে আল্লাহ তার এই কাজের প্রতিদান স্বরূপ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করালেন।’’
লোকেরা বলল, ‘হে আল্লাহর রাসুল(ﷺ)! জীব-জন্তুর প্রতি দয়াপ্রদর্শনেও কি আমাদের সওয়াব আছে? তিনি বললেন, ‘‘প্রত্যেক সজীব প্রাণবিশিষ্ট জীবের (প্রতি দয়াপ্রদর্শনে) সওয়াব বিদ্যমান।’’ [18]
তিনি বলেন, ‘‘দুর্ভাগা ছাড়া অন্য কারো (হৃদয়) থেকে দয়া, ছিনিয়ে নেওয়া হয় না।’’ [19]
তিনি এক সাহাবীকে বলেন, ‘‘তুমি যদি তোমার বকরীর প্রতি দয়া প্রদর্শন কর, আল্লাহ তোমার প্রতি দয়া প্রদর্শন করবেন।’’ [20]
বিনা কারণে কোন জীবকে কষ্ট দেবার ব্যাপারে ইসলামে কঠোর হুঁশিয়ারী উচ্চারণ করা হয়েছে।
রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন, ‘‘একটি বিড়ালের কারণে একজন মহিলাকে আযাব দেওয়া হয়েছে; যাকে সে বেঁধে রেখেছিল এবং অবশেষে মারাও গিয়েছিল। সে যখন তাকে (বিড়ালটিকে) বেঁধে রেখেছিল তখন খেতেও দেয়নি ও পান করতেও দেয়নি। আর তাকে ছেড়েও দেয়নি; যাতে সে নিজে স্থলচর কীটপতঙ্গ ধরে খেত।’’ [21]
এক ব্যক্তি তার উটকে ঠিকমত খেতে দিত না, উপরন্তু কষ্ট দিত। তার পাশ দিয়ে রহমতের রাসুল(ﷺ) কে পার হতে দেখে উটটি আওয়াজ দিল এবং তার চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগল। তিনি উটের মালিককে ডেকে বললেন, ‘‘তুমি এই জন্তুর ব্যাপারে আল্লাহকে ভয় করো না কেন, আল্লাহ তোমাকে যার মালিক বানিয়েছেন? ও তো আমার কাছে অভিযোগ করছে যে, তুমি ওকে ভুখা রাখ এবং কষ্ট দাও!’’ [22]
ইসলামে অযথা কোন পশু-পক্ষীকে কষ্ট দেওয়া, সাধ্যের অতীত কোন পশুকে বোঝা বহনে বাধ্য করতে মারধর করা বৈধ নয়। পশু-পক্ষী কিছু অনিষ্ট করে ফেললে, গরু-মহিষ গাড়ি বা হাল টানতে অক্ষম হয়ে পড়লে অতিরিক্ত প্রহার করে নিষ্ঠুরতার পরিচয় দেওয়া বৈধ নয় ।
একবার ইবন উমার(রা.) কুরাইশের একদল তরুণের নিকট পার হয়ে (কোথাও) যাচ্ছিলেন; সে সময় তারা একটি পাখি অথবা মুরগীকে বেঁধে রেখে তাকে লক্ষ্যবস্তু বানিয়ে তীর ছুঁড়ে হাতের নিশা্না ঠিক করা শিক্ষা করছিল। ... ওরা ইবন উমার(রা.)-কে দেখতে পেয়ে এদিক-ওদিক সরে পড়ল। ইবন উমার(রা.) বললেন, ‘কে এ কাজ করেছে? যে এ কাজ করেছে আল্লাহ তাকে অভিশাপ করুন। অবশ্যই আল্লাহর রাসুল(ﷺ) সেই ব্যক্তিকে অভিশাপ করেছেন, যে ব্যক্তি কোন জীবকে (অকারণে) নিশানা বানায়। [23]
একবার রাসুল(ﷺ) একটি গাধার পাশ বেয়ে পার হলেন। গাধাটির মুখে দাগার দাগ দেখে তিনি বললেন, ‘‘আল্লাহ তাকে অভিশাপ করুন, যে একে দেগেছে।’’ [24]
রাসুল(ﷺ) বলেছেন, ‘‘যে ব্যক্তি অধিকার ছাড়া (অযথা) একটি বা তার বেশি চড়ুই হত্যা করবে, কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে সে চড়ুই সম্পর্কে প্রশ্ন করবেন।’’ [25]
রাসুল(ﷺ) বলেছেন, একবার একটি গাছের নিচে একজন নবীকে পিঁপড়ে কামড়ে দিলে তিনি গর্তসহ পিঁপড়ের দল পুড়িয়ে ফেললেন। আল্লাহ তাঁকে ওহী করে বললেন, ‘‘তোমাকে একটি পিঁপড়ে কামড়ে দিলে তুমি একটি এমন জাতিকে পুড়িয়ে মারলে, যে (আমার) তাসবিহ পাঠ করত? ...’’ [26]
রাসুল(ﷺ) বলেছেন, ‘‘আল্লাহর নিকট সব চাইতে বড় পাপিষ্ঠ সেই ব্যক্তি, যে কোন মহিলাকে বিবাহ করে, অতঃপর তার নিকট থেকে মজা লুটে নিয়ে তাকে তালাক দেয় এবং তার মোহরও আত্মসাৎ করে। (দ্বিতীয় হল) সেই ব্যক্তি, যে কোন লোককে মজুর খাটায়, অতঃপর তার মজুরী আত্মসাৎ করে এবং (তৃতীয় হল) সেই ব্যক্তি, যে অযথা পশু হত্যা করে।’’ [27]
আরো একটি প্রশ্ন আসতে পারে যে, গিরগিটি যদি ক্ষতিকর প্রাণীই হয়ে থাকে, একে যদি মেরেই ফেলতে হবে - তাহলে আল্লাহ্ একে কেন সৃষ্টি করলেন?
১। বিভিন্ন অনিষ্টকর বস্তু এবং জীব-জন্তু থাকবার কারণে মানুষ আল্লাহর নিকট বিভিন্ন যিকির (স্মরণ) ও দোয়ায় অভ্যস্ত হতে পারে যারা দ্বারা সে সৃষ্টির অনিষ্ট থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চায়।
২। এর মাঝে আল্লাহর অসামান্য সৃষ্ট নৈপুণ্যের প্রমাণ ও নিদর্শন রয়েছে। ক্ষুদ্র প্রাণী গিরগিটি মানুষকে অনেক বড় ক্ষতি করতে পারে। আবার এর চেয়ে বৃহৎ প্রাণী উট মানুষকে কোনো ক্ষতি করে না। এর মাঝে মানুষের জন্য নিদর্শন রয়েছে।
৩। মানুষ পৃথিবীর এই সব কষ্টদায়ক প্রাণীর দ্বারা শিক্ষাগ্রহন করতে পারে যে, দুনিয়াতে যদি এদের থেকে কষ্টকর রোগ-ব্যধি হতে পারে, তাহলে আখিরাতের শাস্তি কত কঠোর! আল কুরআন ও হাদিসে জাহান্নামে সাপ-বিচ্ছুর আযাবের কথা বলা হয়েছে।
৪। মানুষ জানবে যে আল্লাহর সৃষ্টির মধ্যে কোনগুলো কল্যাণকর। সেগুলোর জন্য আল্লাহর নিকট শুকরিয়া আদায় করবে। আর যেগুলো কষ্টদায়ক – সেগুলো থেকে আল্লাহর নিকট পানাহ চাইবে।
উপরের আলোচনায় আমরা দেখলাম যে ইসলামে কোনোভাবেই বিনা কারণে জীব-জন্তু হত্যা করা জায়েজ নয়। যারা গিরগিটি হত্যার হাদিস দেখিয়ে ইসলামকে নিষ্ঠুর ও বর্বর ধর্ম হিসাবে দেখাতে চায় – তারা ভুলের মধ্যে আছে। গিরগিটি ও অন্য সকল প্রাণীর সৃষ্টির মধ্যে আল্লাহ্ তা’আলার অসাধারণ হিকমতের পরিচয় রয়েছে। সুতরাং যাদের উপলব্ধি করার ক্ষমতা রয়েছে, তারা এ থেকে শিক্ষা গ্রহণ করুক।
এ প্রসঙ্গে শায়খ আবু বকর মুহাম্মাদ যাকারিয়ার এই আলোচনাটিও দেখা যেতে পারেঃ https://youtu.be/YIuLkM6m-YY
তথ্যসূত্রঃ
[1]. সহীহ বুখারী ৩৩০৭, ৩৩৫৯, সহীহ মুসলিম ২২৩৭, নাসায়ী ২৮৮৫, ইবনু মাজাহ ৩২২৮, মুসনাদ আহমাদ ২৬৮১৯, ২৭০৭২, দারিমী ২০০০, রিয়াদুস সলিহীন ১৮৭২
[2]. সহীহ মুসলিম, তিরমিযী, সুনান আবু দাউদ, হাদিস নং : ৫২৬৩
[3]. সুনান ইবন মাজাহ, হাদিস নং ৩২৩১
[4]. ■ “Gecko _ reptile _ Britannica.com”
https://www.britannica.com/animal/gecko
■ “The Many Types Of Geckos - Tail and Fur”
https://tailandfur.com/the-many-types-of-geckos/
■ “Dangerous of Wild Animals_ Gecko”
http://dangerous-wild-animals.blogspot.com/2010/10/gecko.html
[5]. তাকমিলা ফাতহিল মুলহিম ৪/৩৫০
[6]. ইবরিযিয়্যা ২/৮৭ [শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ(র.)]
[7]. শারহু সহীহ বুখারী ৫/৫৭৩ [শায়খ মুহাম্মাদ বিন সালিহ আল উসাঈমিন(র.)]
[8]. দেখুন – ‘বাজলুল মাজহুদ’ ২০/২০২, [খলিল আহমেদ শাহরানপুরী]; ‘তুহফাতুল কারী’ ৪/৫২৮ [মুফতি পালনপুরী], ‘যাখিরাতুল উক্ববাহ শারহ নাসাঈ’ ২৫/৮ [মুহাম্মদ ইবনে আলী ইবনে আদাম ইবন মুসা], ‘ফাতহুল বারী’ ৪/৪১ [ইবন হাজার আসকালানী]
[9]. আল কুরআন, আন’আম ৬ : ১৬৪
[10]. আল কুরআন, বনী ইস্রাঈল (ইসরা) ১৭ : ১৫
[11]. “Geckos resistant to antibiotics, may pose risk to pet owners, study finds -- ScienceDaily”
https://www.sciencedaily.com/releases/2015/05/150514141039.htm
[12]. Christine L. Casey, Sonia M. Hernandez, Michael J. Yabsley, Katherine F. Smith, Susan Sanchez. The carriage of antibiotic resistance by enteric bacteria from imported tokay geckos (Gekko gecko) destined for the pet trade. Science of The Total Environment, 2015; 505: 299 DOI: 10.1016/j.scitotenv.2014.09.102
[https://linkinghub.elsevier.com/retrieve/pii/S0048969714014247]
[13]. ■ “Why You Don’t Want to Get Bitten by A Tokay Gecko _ Tokay Gecko Guide”
http://tokaygeckoguide.com/why-you-dont-want-to-get-bitten-by-a-tokay-gecko/1603/
■ “Gecko Bite” (Reptile Magazine)
http://www.reptilesmagazine.com/Lizard-Care/Lizard-Bite/
[14]. “Geckos Linked to Dangerous Salmonella Outbreak in 16 States - ABC News”
[15]. সহীহ বুখারী ১৮৩১, সহীহ মুসলিম ২২৩৯, সুনান নাসাঈ ২৮৮৬, মুসনাদ আহমাদ ২৪০৪৭, ২৪৬৮৯, ২৫৮০০, ২৫৮৫০
[16]. সহীহ মুসলিম, মুসনাদ আহমাদ, সুনান আবু দাউদ হাদিস নং : ৫২৬২
[17]. আওনুল মা’বুদ, পৃষ্ঠা ২৩৮২
[18]. সহীহ বুখারী, হা/ ২৪৬৬ , সহীহ মুসলিম, হা/২২৪৪
[19]. মুসনাদ আহমাদ, ২/৩০১, সুনান আবু দাউদ ৪৯৪২, তিরমিযী, ইবন হিববান, সহীহুল জা’মে হা/৭৪৬৭
[20]. হাকিম, সহীহ তারগীব ২২৬৪
[21]. সহীহ বুখারী, হা/ ২৩৬৫, ৩৪৮২
[22]. মুসনাদ আহমাদ, আবু দাঊদ, হাকিম, সিলসিলাহ সহীহাহ হা/২০
[23]. সহীহ বুখারী, হা/ ৫৫১৫, সহীহ মুসলিম, হা/১৯৫৮
[24]. সহীহ মুসলিম, হা/২১১৬
[25]. সুনান নাসাঈ, সহীহ তারগীব ২২৬৬
[26]. সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, হা/২২৪১
[27]. হাকিম, বাইহাকী, সহীহুল জা’মে হা/১৫৬৭
ইসলামে জীবে দয়া ও এ সকল বিষয়ে দলিলসহ বিস্তারিত আলোচনার জন্য এই বইটি দেখুনঃ ‘ইসলামী জীবন-ধারা’ [আবদুল হামীদ ফাইযী]
[ কৃতজ্ঞতা স্বীকারঃ মাওলানা মুহাম্মাদ আব্দুর রহমান (হাফিযাহুল্লাহ) ]
=============================
*টিকটিকি বা গিরগিটি মারা সম্পর্কে সহীহ হাদীস*
কুতুবুত সিত্তাহ থেকে সংগৃহীত
মহান আল্লাহর বাণীঃ আর আল্লাহ ইবরাহীম (আঃ)-কে বন্ধুরূপে গ্রহণ করেছেন- (আন্-নিসা ১২৫)।
بَابُ قَوْلِ اللهِ تَعَالَى وَاتَّخَذَ اللهُ إِبْرَاهِيْمَ خَلِيْلًا حَدَّثَنَا عُبَيْدُ اللهِ بْنُ مُوْسَى أَوْ ابْنُ سَلَامٍ عَنْهُ أَخْبَرَنَا ابْنُ جُرَيْجٍ عَنْ عَبْدِ الْحَمِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ عَنْ سَعِيْدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أُمِّ شَرِيكٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم أَمَرَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَقَالَ كَانَ يَنْفُخُ عَلَى إِبْرَاهِيْمَ عَلَيْهِ السَّلَام
৩৩৫৯. উম্মু শারীক (রাঃ) হতে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরগিটি মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন এবং তিনি বলেছেন, ওটা ইবরাহীম (আঃ) যে অগ্নিকুন্ডে নিক্ষিপ্ত হয়েছিলেন তাতে এ গিরগিটি ফুঁ দিয়েছিল। (৩৩০৭) (আধুনিক প্রকাশনীঃ ৩১১০, ইসলামিক ফাউন্ডেশনঃ ৩১১৮)
*ব্যাখ্যাঃ* অপর বর্ণনায় রয়েছে, যে ব্যক্তি প্রথম প্রহারেই গিরগিটি হত্যা করবে তার জন্য ১০০ নেকী তার ‘আমলনামায় লিখা হবে। দ্বিতীয় প্রহারে মারলে তার থেকে কম নেকী পাবে আর তৃতীয় প্রহারে মারলে দ্বিতীয় প্রহারে মারার থেকে কম নেকী পাবে। অন্য বর্ণনায় রয়েছে প্রথম প্রহারে মারলে ৭০ নেকী পাবে। ‘উলামাগণ এ মর্মে একমত যে, গিরগিটি ক্ষতিকারক প্রাণীর অন্তর্ভুক্ত। وَزَغِ শব্দটির বহুবচন হলো أَوْزَاغٌ وَوِزْغَانٌ ইত্যাদি। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ প্রাণীর হত্যা করার নির্দেশ দিয়েছেন এবং হত্যার প্রতি উৎসাহ প্রদান করেছেন। কারণ তা মারাত্মক ক্ষতিকারক প্রাণী। (শারহুন নাবাবী ১৪শ খন্ড, হাঃ ২২৩৭/১৪২)
হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সহীহ বুখারী হাদিস নম্বরঃ ৩৩৫৯
সহীহ মুসলিম (৫৯৮১)-৩৮, মুসনাদে আহমাদ ২৪৫৩৪, মুসান্নাফ ‘আবদুর রায্যাক ৮৩৯০, সিলসিলাতুস্ সহীহাহ্ ১৫৮১, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৯৮০, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৬৩৫, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১৯৮৪৮।
===========================
بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ وَعَنْ سَعْدِ بْنِ أَبِي وَقَّاصٍ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - أَمَرَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَسَمَّاهُ فُوَيْسِقًا . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
৪১২০-[১৭] সা‘দ ইবনু আবূ ওয়াক্কাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁকলাস মেরে ফেলার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন এবং তাকে ক্ষুদ্র ফাসিক বলে অভিহিত করেছেন। (মুসলিম)[1]
[1] সহীহ : মুসলিম (৫৯৮১)-৩৮, সহীহ ইবনু হিব্বান ৫৬৩৫, আবূ দাঊদ ৫২৬২, মুসনাদে আহমাদ ১৫২৩, মুসান্নাফে ‘আবদুর রায্যাক ৮৩৯০, সহীহ আত্ তারগীব ২৯৮১, আস্ সুনানুল কুবরা লিল বায়হাক্বী ১০৩৪২। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
بَابُ مَا يَحِلُّ أَكْلُهُ وَمَا يَحْرُمُ وَعَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ - رَضِيَ اللَّهُ عَنْهُ - أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ - صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ - قَالَ : " مَنْ قَتَلَ وَزَغًا فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ كُتِبَ لَهُ مِائَةُ حَسَنَةٍ ، وَفِي الثَّانِيَةِ دُونَ ذَلِكَ ، وَفِي الثَّالِثَةِ دُونَ ذَلِكَ " . رَوَاهُ مُسْلِمٌ
৪১২১-[১৮] আবূ হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি গিরগিটিকে প্রথম আঘাতে বধ করবে, তার জন্য (‘আমলনামায়) একশত নেকি লিখা হবে। আর দ্বিতীয় আঘাতে মারলে (তার জন্য) তার চাইতে কম এবং তৃতীয় আঘাতে মারলে (তার জন্য) তা অপেক্ষা কম লিখা হবে। (মুসলিম)[1]
*ব্যাখ্যাঃ* ‘আল্লামা ‘ইয্যুদ্দীন (রহিমাহুল্লাহ) বলেনঃ প্রথম প্রহারে গিরগিটি হত্যার সাওয়াবের আধিক্যের কারণ হলো, হতে পারে প্রথম প্রহারে মারলে প্রাণীর প্রতি ইহসান করা হয়, বিধায় সাওয়াব বেশি। কেননা নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ আল্লাহ তা‘আলা প্রত্যেক বস্তুর প্রতি ইহসান ফরয করেছেন, কাজেই যখন তোমরা হত্যা করবে তখন উত্তমরূপে হত্যা করবে। অথবা ভালো কাজ দ্রুত সমাধার জন্যও সাওয়াব বেশি হতে পারে। আল্লাহ তা‘আলা বলেন, وَسَارِعُوا إِلٰى مَغْفِرَةٍ مِّنْ رَبِّكُمْ ‘‘তোমরা কল্যাণে অগ্রগামী হও’’- (সূরাহ্ আ-লি ‘ইমরান ৩ : ১৩৩)। আর এ উভয় কারণই সাপ কিংবা বিচ্ছুর ক্ষেত্রে অগ্রাধিকারযোগ্য। কারণ উভয় প্রাণীর মধ্যে বিপর্যয়ের আধিক্য রয়েছে। (‘আওনুল মা‘বূদ ৮ম খন্ড, হাঃ ৫২৫৪)
[1] সহীহ : সহীহ মুসলিম (৫৯৮৪)-৩৮, ইবনু মাজাহ ৩২২৯, সহীহ আত্ তারগীব ওয়াত্ তারহীব ২৯৭৮, সহীহুল জামি‘ ৬৪৬০। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
تْلِ الْوَزَغِ حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا سُفْيَانُ بْنُ عُيَيْنَةَ، عَنْ عَبْدِ الْحَمِيدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ، عَنْ أُمِّ شَرِيكٍ، أَنَّ النَّبِيَّ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَمَرَهَا بِقَتْلِ الأَوْزَاغِ .
১/৩২২৮। উম্মু শারীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে গিরগিটি হত্যা করার নির্দেশ দেন।
সহীহুল বুখারী ৩৩০৭, ৩৩৫৯, মুসলিম ২২৩৭, নাসায়ী ২৮৮৫, আহমাদ ২৬৮১৯, ২৭০৭২, দারেমী ২০০০, সহীহাহ ১৫৮১। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
==========================
تْلِ الْوَزَغِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ الْمَلِكِ بْنِ أَبِي الشَّوَارِبِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الْعَزِيزِ بْنُ الْمُخْتَارِ، حَدَّثَنَا سُهَيْلٌ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنْ رَسُولِ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ " مَنْ قَتَلَ وَزَغًا فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الثَّانِيَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا - أَدْنَى مِنَ الأُولَى - وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّالِثَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً - أَدْنَى مِنَ الَّذِي ذَكَرَهُ فِي الْمَرَّةِ الثَّانِيَةِ " .
২/৩২২৯। আবূ হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেনঃ যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতে গিরগিটি হত্যা করতে পারবে, তার জন্য এত এত পরিমাণ পুণ্য। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে তা হত্যা করতে পারবে তার জন্য এই এই পরিমাণ পুণ্য (কি প্রথম আঘাতের তুলনায় কম)। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করতে পারবে, তার জন্য এই এই পরিমাণ কুণ্য (কিন্তু দ্বিতীয় আঘাতের তুলনায় কম)।
মুসলিম ২২৪০, তিরমিযী ১৮৮২, আবূ দাউদ ৫২৬৩, আহমাদ ৮৪৪৫। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। উক্ত হাদিসের রাবী সুহায়ল বিন আবু সালিহ সম্পর্কে মুহাম্মাদ বিন সাঈদ বলেন, তিনি সিকাহ। সুফইয়ান বিন উয়াইনাহ বলেন, সাবত। আহমাদ বিন হাম্বল বলেন, তার বর্ণিত হাদিস সহিহ নয়। ইমাম নাসাঈ বলেন, কোন সমস্যা নেই। ইবনু আদী বলেন, তার খবর মাকবুল বা গ্রহণযোগ্য। ইবনু হিব্বান বলেন, তিনি সিকাহ তবে অন্যত্র বলেন, তিনি হাদিস বর্ণনায় ভুল করেন। (তাহযীবুল কামালঃ রাবী নং ২৬২৯, ১২/২২৩ নং পৃষ্ঠা) হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
تْلِ الْوَزَغِ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ عَمْرِو بْنِ السَّرْحِ، حَدَّثَنَا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ وَهْبٍ، أَخْبَرَنِي يُونُسُ، عَنِ ابْنِ شِهَابٍ، عَنْ عُرْوَةَ بْنِ الزُّبَيْرِ، عَنْ عَائِشَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ قَالَ لِلْوَزَغِ " الْفُوَيْسِقَةُ " .
৩/৩২৩০। আয়েশা থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরগিটি সম্পর্কে বলেনঃ তা ক্ষতিকর প্রাণী।
সহীহুল বুখারী ১৮৩১, মুসলিম ২২৩৯, নাসায়ী ২৮৮৬, আহমাদ ২৪০৪৭, ২৪৬৮৯, ২৫৮০০, ২৫৮৫০। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
تْلِ الْوَزَغِ حَدَّثَنَا أَبُو بَكْرِ بْنُ أَبِي شَيْبَةَ، حَدَّثَنَا يُونُسُ بْنُ مُحَمَّدٍ، عَنْ جَرِيرِ بْنِ حَازِمٍ، عَنْ نَافِعٍ، عَنْ سَائِبَةَ، - مَوْلاَةِ الْفَاكِهِ بْنِ الْمُغِيرَةِ - أَنَّهَا دَخَلَتْ عَلَى عَائِشَةَ فَرَأَتْ فِي بَيْتِهَا رُمْحًا مَوْضُوعًا فَقَالَتْ يَا أُمَّ الْمُؤْمِنِينَ مَا تَصْنَعِينَ بِهَذَا قَالَتْ نَقْتُلُ بِهِ هَذِهِ الأَوْزَاغَ فَإِنَّ نَبِيَّ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ أَخْبَرَنَا أَنَّ إِبْرَاهِيمَ لَمَّا أُلْقِيَ فِي النَّارِ لَمْ تَكُنْ فِي الأَرْضِ دَابَّةٌ إِلاَّ أَطْفَأَتِ النَّارَ غَيْرَ الْوَزَغِ فَإِنَّهَا كَانَتْ تَنْفُخُ عَلَيْهِ فَأَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ ـ صلى الله عليه وسلم ـ بِقَتْلِهِ .
৪/৩২৩১। ফাকিহা ইবনুল মুহীরার মুক্তদাসী সাইবা থেকে বর্ণিত তিনি আয়েশা (রাঃ)-র নিকট প্রবেশ করে তার ঘরে একটি বর্শা রক্ষিত দেখতে পান। তিনি জিজ্ঞেস করেন, হে উম্মুল মুমিনীন! আপনারা এটা দিয়ে কী করেন? তিনি বলেন, আমরা এই বর্শা দিয়ে এসব গিরগিটি হত্যা করি। কারণ আল্লাহর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদের অবহিত করেছেন যে, ইবরাহীম (আ)-কে যখন অগ্নিকুন্ডে নিক্ষেপ করা হলো তখন পৃথিবীর বুকে এমন কোন প্রাণী ছিলো না, যা আগুন নিভাতে চেষ্টা করেনি, গিরগিটি ব্যতীত। সে বরং আগুনে ফুঁ দিয়েছিল। তাই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এটিকে হত্যা করার নির্দেশ দেন।
আহমাদ ২৪০১৩, ২৪২৫৯, ২৫২৯৯, সহীহাহ ১৫৮১, আত-তালীকুর রাগীব ৪/৩৭। তাহকীক আলবানীঃ সহীহ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
টিকটিকি হত্যা
قَتْلُ الْوَزَغِ أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ يَزِيدَ الْمُقْرِئُ قَالَ حَدَّثَنَا سُفْيَانُ قَالَ حَدَّثَنِي عَبْدُ الْحَمِيدِ بْنُ جُبَيْرِ بْنِ شَيْبَةَ عَنْ سَعِيدِ بْنِ الْمُسَيَّبِ عَنْ أُمِّ شَرِيكٍ قَالَتْ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَتْلِ الْأَوْزَاغِ
২৮৮৮. মুহাম্মদ ইবন আবদুল্লাহ্ ইবন ইয়ায়ীদ মুকরী (রহঃ) ... উম্মে শরীক (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে টিকটিকি হত্যা করতে আদেশ করেছেন।
তাহক্বীকঃ সহীহ। ইবন মাজাহ ৩২২৮। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
টিকটিকি হত্যা
قَتْلُ الْوَزَغِ أَخْبَرَنَا وَهْبُ بْنُ بَيَانٍ قَالَ حَدَّثَنَا ابْنُ وَهْبٍ قَالَ أَخْبَرَنِي مَالِكٌ وَيُونُسُ عَنْ ابْنِ شِهَابٍ عَنْ عُرْوَةَ عَنْ عَائِشَةَ أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ الْوَزَغُ الْفُوَيْسِقُ
২৮৮৯. ওহাব ইবন বিয়ান (রহঃ) ... আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ টিকটিকি অনিষ্টকারী প্ৰাণী।
তাহক্বীকঃ সহীহ। সহীহ জামে' আস-সগীর ৭১৪৯। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
===========================
টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে
بَابٌ فِي قَتْلِ الْأَوْزَاغِ حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ مُحَمَّدِ بْنِ حَنْبَلٍ، حَدَّثَنَا عَبْدُ الرَّزَّاقِ، حَدَّثَنَا مَعْمَرٌ، عَنِ الزُّهْرِيِّ، عَنْ عَامِرِ بْنِ سَعْدٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: أَمَرَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِقَتْلِ الْوَزَغِ وَسَمَّاهُ فُوَيْسِقًا صحيح
৫২৬২। ‘আমির ইবনু সা‘দ (রহঃ) থেকে তার পিতার সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম গিরগিটি (টিকটিকি) মারার হুকুম করেছেন। তিনি তার নাম দিয়েছেন অনিষ্টকারী।[1]
সহীহ।
[1]. মুসলিম, আহমাদ। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনান আবূ দাউদ হাদিস নম্বরঃ ৫২৬২
===========================
টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে
بَابٌ فِي قَتْلِ الْأَوْزَاغِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ الْبَزَّازُ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ زَكَرِيَّا، عَنْ سُهَيْلٍ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: مَنْ قَتَلَ وَزَغَةً فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ فَلَهُ، كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً، وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّانِيَةِ فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً، أَدْنَى مِنَ الْأُولَى، وَمَنْ قَتَلَهَا فِي الضَّرْبَةِ الثَّالِثَةِ، فَلَهُ كَذَا وَكَذَا حَسَنَةً أَدْنَى مِنَ الثَّانِيَةِ صحيح
৫২৬৩। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ যে ব্যক্তি প্রথম আঘাতে একটি গিরগিটি (টিকটিকি) হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ সওয়াব রয়েছে। যে ব্যক্তি দ্বিতীয় আঘাতে এটি হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সাওয়াব রয়েছে, যা প্রথম আঘাতে মারার তুলনায় কম। আর যে ব্যক্তি তৃতীয় আঘাতে তা হত্যা করবে, তার জন্য এরূপ এরূপ সওয়াব রয়েছে, যা দ্বিতীয় আঘাতে হত্যার চেয়ে কম।[1]
সহীহ।
[1]. মুসলিম, তিরমিযী। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনান আবূ দাউদ হাদিস নম্বরঃ ৫২৬৩
===========================
টিকটিকি হত্যা করা সম্পর্কে
بَابٌ فِي قَتْلِ الْأَوْزَاغِ حَدَّثَنَا مُحَمَّدُ بْنُ الصَّبَّاحِ الْبَزَّازُ، حَدَّثَنَا إِسْمَاعِيلُ بْنُ زَكَرِيَّا، عَنْ سُهَيْلٍ، قَالَ: حَدَّثَنِي أَخِي أَوْ أُخْتِي عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: فِي أَوَّلِ ضَرْبَةٍ سَبْعِينَ حَسَنَةً صحيح
৫২৬৪। আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) সূত্রে বর্ণিত। নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ প্রথম আঘাতে মারতে পারলে তার জন্য সত্তর নেকী রয়েছে।[1] সহীহ।
[1]. মুসলিম। হাদিসের মানঃ সহিহ (Sahih)
সুনান আবূ দাউদ হাদিস নম্বরঃ ৫২৬৪
====================================================
প্রশ্ন : টিকটিকি মারার বিষয়ে হাদিসে কোনো নির্দেশনা আছে কি?
উত্তর : টিকটিকি মারার বিষয়ে রাসুল (সা.) হাদিস থেকে বোঝা যায়, টিকটিকি মারার বিষয়ে উদ্বুদ্ধ করেছেন, সেটি টিকটিকির ক্ষতির কারণে। আমরা যে টিকটিকি দেখতে পাচ্ছি সেটাকে হাদিসের পরিভাষায় বলা হয়ে থাকে ওয়াজাক। কুমিরের মতো দেখতে যে প্রাণীগুলো আছে, সেগুলোর মধ্যে প্রায় ২৫ প্রকারের প্রাণী আছে। সুতরাং, ওয়াজাক বা টিকটিকি বা গিরগিটি এক প্রকার প্রাণী, যা থেকে এক ধরনের বিষ নিঃসরণ হয়ে থাকে, সেগুলো মানুষের জন্য ক্ষতিকর। এই জন্য নবী করিম (সা.) এগুলো হত্যার জন্য দিক নির্দেশনা দিয়েছেন। তবে নবী করিম (সা.)-এর এই নির্দেশনাটুকু নির্দেশ নয় বা অপরিহার্য বিষয় নয়। সুতরাং, এটা পালন করা বাধ্যতামূলক বা ওয়াজিব নয়। বিষাক্ত হওয়ার কারণে প্রয়োজনবোধে মারতে পারবেন। (ডা: মুহাম্মদ সাইফুল্লাহ) ।
Featured Post
প্রশ্নোত্তর পর্বসমূহ
আস সালামু আলাইকুম । আপনারা তাফহীমুল কুরআন এ্যাপের মাধ্যমে যে প্রশ্নগুলো করেছেন এখানে সেগুলোর উত্তর তালিকা আকারে দেওয়া হয়েছে। বিগত দিনের ...
-
يَا بَنِي إِسْرَائِيلَ اذْكُرُوا نِعْمَتِيَ الَّتِي أَنْعَمْتُ عَلَيْكُمْ وَأَنِّي فَضَّلْتُكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ (২-সুরা-বাক্বারা:১২২.)...
-
(Version 1): Zekr Software With Tafhimul Quran : ডাউনলোড করার পর এক্সট্রাক্ট করে নিবেন ইনশাআল্লাহ: 1. Download Zekr Here 2. Instructions...
-
গলায় মাছের কাঁটা আঁতকে যাওয়া যেমন অস্বস্তিকর ঠিক তেমনই কষ্টকর। তবে কিছু উপায় জানা থাকলে আপনি অল্প সময়ে দূর করতে পারবেন এই কাঁটা। জেনে নিন ত...
-
ثُمَّ أَفِيضُوا مِنْ حَيْثُ أَفَاضَ النَّاسُ وَاسْتَغْفِرُوا اللَّهَ ۚ إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَّحِيمٌ (০২-বাক্বারা-১৯৯.) তারপর যেখান থে...
-
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহীম ইসলামী জীবন বিধান, কুরআন, হাদীস, ইতিহাস, ফিকাহ, আধুনিক ইসলামী যুগ জিজ্ঞাসা ইত্যাদি সংক্রান্ত আপনার যে কোন প...
-
وَإِذْ غَدَوْتَ مِنْ أَهْلِكَ تُبَوِّئُ الْمُؤْمِنِينَ مَقَاعِدَ لِلْقِتَالِ ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ (৩-আলে-ইমরান:১২১.) (হে নবী!৯৪ মুস...
-
ইমামতির নিয়ম কানুন । ইমামতির জন্য আলাদা কোন নিয়ম কানুন আছে কি ? এই ভিডিওটি দেখুন (ক্লিক করুন) : ইমামতির জন্য আলাদা নিয়ম কান...
-
আসসালামু আলাইকুম । এই এ্যাপে প্রায় সাড়ে সাতাত্তর হাজার করে বাংলা, ইংরেজী ও আরবী শব্দ রয়েছে। Next - Go to Dictionary বাটনে প্রেস কর...
-
এ ব্যাপারে ইসলামিক স্কলারদের আলোচনা থেকে নিন্মোক্ত বিষয়গুলি জানা যায়। এ থেকেই আপনি সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন, বিবাহে গায়ে হলুদ অনুষ্ঠান করবেন ক...
-
ড. মুহাম্মদ ঈসা শাহেদী: ‘সিনা চাক’ বা বক্ষবিদারণ শব্দটি উচ্চারণের সাথে সাথে আমাদের চিন্তা চলে যায় দেড় হাজার বছর আগে ইতিহাসের একটি বাঁ...